সিঙ্গুরের জমিতে সর্ষে বীজ ছড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র
হাজার একর জমিটা ছিল তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের তখ্তে বসানোর অন্যতম হাতিয়ার। বিজেপি এখন রাজ্যের ক্ষমতা বদলের ভরকেন্দ্র হিসেবে সেই সিঙ্গুরকেই পাখির চোখ করতে চাইছে। বিজেপি-র এই অবস্থান অজানা নয় রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের।
তাই সিঙ্গুর নিয়ে খোদ মমতার সুরবদল! হুগলির এই জনপদে রাজনৈতিক মহলে বুধবার এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে। প্রতিক্রিয়া হয়েছে চাষিদের মধ্যেও।
বুধবার বিধানসভায় সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়েছেন, সম্ভবত ওই জমিতে চাষের ক্ষেত্রে কৃষকরা আর খুব একটা আগ্রহী নন। সেখানে এখন চাষের জমির পরিমাণও কম। সরকার সব রকম চেষ্টা করলেও কাউকে দিয়ে জোর করে চাষ করানো যায় না।
২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, সিঙ্গুরের জমি ইচ্ছুক, অনিচ্ছুক নির্বিশেষে চাষিদের ফিরিয়ে দিতে হবে। এক ধাপ এগিয়ে ওই জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন মমতা। নিজে হাতে সর্ষে বীজ ছড়িয়ে ওই জমিতে চাষের ‘সূচনা’ও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জমি ফলন দেয়নি। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কী বলছেন সিঙ্গুরের চাষিরা?
এখন জমিতে লাগানো ১০০ দিনের কাজের সাইনবোর্ড। ছবি: দীপঙ্কর দে
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে চাষিরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার দাবি করলেও ওই জমি আদৌ চাষযোগ্য হয়নি। ফলে, চাষের পরিস্থিতিই নেই। ২৬২ একর জমিতে কারখানার কাজে খুব একটা হাত পড়েনি বলে একমাত্র সেখানেই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। টাটাদের প্রকল্পে কাজ পেয়েছিলেন অরিজিৎ মণ্ডল। টাটা-বিদায়ে তিনি কাজ হারান। ওই যুবকের ক্ষোভ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এখন কলকাতায় বসে এ সব বলছেন কেন? আগে তো এখানে প্রায়ই আসতেন। এখন আসছেন না কেন? এখানে এসে আমাদের হাল দেখে যান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কী হল বলুন? না চাষ, না শিল্প। আমার মতো যাঁরা কাজ পেয়েও বেকার হলেন, তাঁদের কথা কে ভাববে!’’
চাষ না হওয়ায় ভুবন বাগুই দুষছেন প্রশাসনের কর্তাদের। তিনি বলেন, ‘‘এত যজ্ঞ যে কারণে হল, সেই চাষটাই করা গেল না। চাষিদের সঙ্গে নবান্নের কর্তাদের সমন্বয়ই গড়ে ওঠেনি। চাষিদের যুক্ত করে একটা কমিটি তৈরির কথা হয়েছিল। তাও হয়নি।’’
সে দিনের কর্মব্যস্ত সিঙ্গুর। পিছনে টাটাদের কারখানা। —ফাইল চিত্র
টাটা প্রকল্পে জমি দিয়েছিলেন বিফল বাঙাল। তিনি বলেন, ‘‘ওই জমিকে চাষযোগ্য করতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ওই টাকা জলে গিয়েছে। শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী জনতাকে সব হিসেব বুঝিয়ে দিন। সাধারণ মানুষের অত টাকা নষ্ট হল কেন, তার জবাব দেওয়া হোক।’’
বিরোধীরাও মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়ছেন না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘এখন কী বিদায় বেলায় বোধদয় হল?’’ তাঁর কথায়, ‘‘সিঙ্গুর শিল্প চেয়েছিল। উনি তা হতে দেননি। এক সময় সিঙ্গুরে সর্ষে বীজ ছড়িয়েছিলেন। এখন তার ঝাঁঝ ভালই টের পাচ্ছেন। তাই আমাদের সুরে কথা বলছেন।’’ স্থানীয় সাংসদ লকেট ফের জানিয়ে দেন, ‘‘আমরা রাজ্যের ক্ষমতায় এলে ওই জমিতে শিল্প গড়ব। মুখ্যমন্ত্রী দেখে নেবেন।’’ হুগলি জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি ওঁরই আন্দোলনের ফল। এখন কাঁদুনি গেয়ে কী করবেন?’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘ওখানে চাষের জন্য রাজ্য সরকার কম চেষ্টা করেনি। চাষিরা উদ্যোগী হলে নিশ্চয়ই ওখানে চাষ সম্ভব হবে। বিরোধীরা অযথা রাজনীতি করছেন।’’