প্রাপ্য বেতনের দাবিতে রিষড়ায় অবরোধ সেবা সদনের কর্মীদের

বেতনের দাবিতে এ বার পথ অবরোধ করলেন হুগলির রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালের কর্মীরা। ওই হাসপাতালে ৭২ জন কর্মী আছেন। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস তাঁরা বেতন পাননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০১:০৮
Share:

ঘেরাও: তখনও পথ আটকে রয়েছে কর্মীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

বেতনের দাবিতে এ বার পথ অবরোধ করলেন হুগলির রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালের কর্মীরা।

Advertisement

ওই হাসপাতালে ৭২ জন কর্মী আছেন। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস তাঁরা বেতন পাননি। ফলে সংসার চালাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইএসআই বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধাও মিলছে না। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। দিন কয়েক আগে হাসপাতাল সুপারকে তাঁরা ঘেরাও করেন। তাতে সমস্যার সমাধান অবশ্য হয়নি।

গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া তদারকি কমিটি ওই হাসপাতাল পরিচালনা করছে। কমিটির সভাপতি শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক। সোমবার মহকুমাশাসক রজত নন্দ হাসপাতালে যান। সেখানে কিছু কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেন তিনি। কর্মীরা জানান, মহকুমাশাসক তাঁদের বক্তব্য শোনেননি। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ফের আসবেন। সেই মতো এ দিন বিকেলে কর্মীরা তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য লিখিত আকারে জানানোরও সিদ্ধান্ত নেন। যদিও মহকুমাশাসক আসেননি। বিকেল পৌঁনে পাঁচটা নাগাদ কর্মীদের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় তিনি যেতে পারছেন না। এর পরেই বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ কর্মীরা হাসপাতালের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন।

Advertisement

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, মহকুমাশাসককে ঘটনাস্থলে এসে দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে হবে বলে দাবি তোলেন তাঁরা। মহিলা কর্মীরা বেঞ্চ পেতে রাস্তায় বসে পড়েন। অবরোধের জেরে রিষড়া প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া লেভেল ক্রসিংয়ের দুই প্রান্তে যানজট হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রিষড়া থানার পুলিশ আসে। তাদের অনুরোধেও অবরোধ তুলতে চাননি বিক্ষোভকারীরা। পরে রিষড়ার ওসি প্রবীর দত্ত আসেন ঘটনাস্থলে। তাঁর আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে রিষড়া পুরসভায় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ অবরোধকারী নার্স, আয়া বা অন্য কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে। বেতন নিয়ে পাকাপাকি ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

রিষড়া স্টেশনের অদূরে ওই হাসপাতালটি কয়েক দশকের পুরনো। এক সময় হুগলি জেলায় চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে এই হাসপাতালে খুব নামডাক ছিল।

রিষড়ার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বল্প টাকায় ভাল চিকিৎসার জন্য বহু মানুষ এখানে আসতেন। বাম আমলে হাসপাতালের সর্বেসর্বা ছিলে‌ন রিষড়ার তৎকালী‌ন পুরপ্রধান, সিপিএম নেতা দিলীপ সরকার। সেই সময় রাজ্য সরকার প্রতি বছর ২৭ লক্ষ টাকা অনুদান দিত। বর্তমান রাজ্য সরকার নানা অভিযোগ তুলে ওই অনুদান বন্ধ করে দেয়। পরিচালন সমিতির সভাপতি দিলীপবাবু-সহ কমিটির অন্যরা ইস্তফা দেন। হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এর পরে কর্মীদের আন্দোলনের জেরে রাজ্য সরকারের তরফে তদারকি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়। বছর খানেক ধরে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা বেতনের একাংশ দিচ্ছিল। মাস কয়েক আগে পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউ অপসারিত হন। পুরপ্রধান পদ নিয়ে ডামাডোলের সময় থেকে পুরসভার টাকা নিয়মিত মিলছে না। তাতেই বেতন আটকে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। তার উপর রোগী ভর্তিও অনেক কমে যাওয়ায় হাসপাতালের উপার্জন তলানিতে ঠেকেছে।

বর্তমান পুরপ্রধান হন বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘পুরসভার তহবিলের অবস্থা ভাল নয়। তা সত্ত্বেও আপাতত দু’মাসের বেতন মেটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসকের ডাকা বৈঠকেই যাবতীয় সমস্যা নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement