এ শহরে সরকারি বা পুরসভা পরিচালিত হাসপাতাল নেই। সেই সমস্যা ঘোচাতে রিষড়ার বন্ধ মাতৃসদনকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজে হাত দিল পুরসভা। রবিবার, নববর্ষের সকালে প্রস্তাবিত হাসপাতালের শিলান্যাস হয়ে গেল। তবে, পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সেবাসদন হাসপাতালকে কেন পুনরুজ্জীবিত করা গেল না, সেই প্রশ্ন তুলছেন শহরের সাধারণ মানুষ।
কয়েক দশক আগে রিষড়ার বাঙ্গুর পার্কে ঈশানচন্দ্র রোডে পুরসভার উদ্যোগে প্রসূতিদের জন্য মাতৃসদন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ২০ বছর বন্ধ থাকায় দোতলা ভবনটি জীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি পুরসভা সেখানে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা করে। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, প্রস্তাবিত হাসপাতালের চৌহদ্দি ৮ কাঠা। জমি পুরসভারই। পুরনো ভবন ভেঙে পাঁচতলা ভবন গড়া হবে। দোতলার কাজ শেষ হলেই পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে বাকি কাজ হবে। প্রসূতি ও স্ত্রী-রোগের পাশাপাশি সাধারণ মেডিসিন, শিশুরোগ, শল্যচিকিৎসা, অস্থি-চিকিৎসা, নাক-কান-গলা, প্যাথলজি, আইসিইউ— সব বিভাগই থাকবে।
পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘পঞ্চাশ শয্যার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে এটি। সরকারি প্রকল্প এবং পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে মোট ৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। এখানে কম খরচে পরিষেবা মিলবে।’’ এ দিন ভিতপুজোয় এলাকার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।
রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে মাতৃসদন ঘিরে যখন আশার আলো দেখাচ্ছে পুরসভা, তখন পশ্চিম প্রান্তে সেবাসদন হাসপাতালে গাঢ় অন্ধকার। কয়েক দশক আগে বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি ওই হাসপাতালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড ছিল। বাম আমলে এক সময় সেটি পুরসভার হস্তক্ষেপে চলত। পরে নানা কারণে হাসপাতালটি মুখ থুবড়ে পড়ে। বহু টালবাহানার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকে ঘিরে পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল এই প্রতিষ্ঠান। এক বছর আগে তারকেশ্বরে প্রশাসনিক বৈঠকে হাসপাতালটিকে অধিগ্রহণের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে বিস্তর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় প্রশাসনের অন্দরে। কিন্তু অধিগ্রহণের সম্ভাবনা যে কার্যত বিশ বাঁও জলে চলে গিয়েছে, সে ইঙ্গিত মেলে এক মাস আগে গুড়াপে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকেই। প্রশাসনিক কর্তারা সেবাসদনে শুধু বহির্বিভাগ চালাতে চান। তবে সেই বিষয়টিও এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘সেবাসদনের ব্যাপারে পুরসভার সরাসরি কিছু করার এক্তিয়ার নেই। তার থেকে নিজস্ব গণ্ডীর মধ্যে থেকে মাতৃসদনকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা সহজ। সেটাই করা হচ্ছে।’’
কিন্তু শহরবাসীর অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক কারণেই সেবাসদনের এই হাল হল। এক প্রবীণ নাগরিকের বক্তব্য, ‘‘মাতৃসদন তো নতুন করে তৈরি করতে হবে। সেবাসদনে সব রয়েছে। সরকার একটু উদ্যোগী হলেই এখানে ভাল পরিষেবা দিতে পারত। চোখের সামনে একটা চালু হাসপাতাল শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’ আর এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘মাতৃসদনে ভবন তৈরিতেই যা টাকা লাগবে, সেবাসদনে তা পরিকাঠামো খাতে খরচ করলে হাসপাতালটা ভাল ভাবেই বেঁচে উঠত।’’