প্রতীকী ছবি।
সকাল সাড়ে ছ`টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা।
চাঁদিফাটা রোদ্দুরে রাস্তায় পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করেও পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছেন অনেকে। কেউ আবার দূর থেকে দেখেছেন। কিন্তু করোনার আতঙ্কে কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। এমনকি, আসেননি স্থানীয় বাসিন্দারাও। শেষে গ্লাভস জোগাড় করে দু`জন বৃদ্ধকে রাস্তা থেকে তোলেন। মূলত তাঁদের উদ্যোগেই মুরারি মুখোপাধ্যায় নামে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
মঙ্গলবার হাওড়ার লিলুয়ার এম বি রোড এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানায়, বালতি কারখানার কর্মী ওই বৃদ্ধ এ দিন সকাল সাড়ে ছ`টা নাগাদ কাজে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর পরে রাস্তাতেই দীর্ঘ সময় পড়েছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, বৃদ্ধকে অনেকেই চেনেন। তিনি অকৃতদার, তাঁর কোমরের সমস্যা রয়েছে। এত তথ্য বৃদ্ধের সম্বন্ধে দিয়েছেন স্থানীয়েরাই। কিন্তু চেনা মানুষটিকে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকতে দেখেও কেউ এগিয়ে যাননি। পুলিশের টহলদারি ভ্যান এসে ওই বৃদ্ধকে কোনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে।
যে বাড়ির পাশে রাস্তার উপরে ওই বৃদ্ধ পড়েছিলেন সেই বাড়ির গৃহবধূ অর্পণা রায় বলেন, ‘‘আমি রোজই দেখতাম ওই বৃদ্ধ মানুষটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজে যাচ্ছেন। ওঁর কোমরে মনে হয় সমস্যা রয়েছে। এ দিন দেখি রাস্তায় শুয়ে আছেন। কিন্তু করোনার ভয়ে কেউই তাঁর কাছে ঘেঁষছেন না।’’
শেষে অজয়কুমার সাউ নামে স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক উদ্ধার করেন মুরারিবাবুকে। তিনিই বৃদ্ধকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে ছায়ায় নিয়ে গিয়ে বসান। এর পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন উৎপল দত্ত নামে আর এক জন। গ্লাভস জোগাড় করে তাঁরা বৃদ্ধকে ধরেন।
অজয় বলেন, ‘‘বালতি কারখানায় কাজ করেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু ওই কারখানার কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। ওঁরা আমাদের বলেন বৃদ্ধের বাড়ির লোকজনকে খবর দিতে। খবর দিলে তাঁর পরিবারের কেউ আসতে চাননি।’’ শেষে পুলিশে খবর দেন অজয়রা। সাড়ে ১২টা নাগাদ লিলুয়া থানার পুলিশ একটি অটোর ব্যবস্থা করে এবং ওই দু’জনের সাহায্যে বৃদ্ধকে কোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, জ্বর কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো কোনও করোনা উপসর্গ ওই বৃদ্ধের ছিল না। ওঁর কোমরের সমস্যা আছে। তাই উঠতে পারছিলেন না।