কমেছে কর্মী, নেই সেচের ব্যবস্থা

হাওড়ার বীজখামার কার্যত ধুঁকছে

এমনিতেই কর্মীর অভাব। তার উপরে মাঠে নেমে হাতে কলমে যাঁদের কাজ করার কথা তাঁদের নৈশপ্রহরীর কাজ করতে হচ্ছে।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১০
Share:

জমা জল বেরোনোর রাস্তা নেই উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বীজ খামারে। ছবি: সুব্রত জানা।

এমনিতেই কর্মীর অভাব। তার উপরে মাঠে নেমে হাতে কলমে যাঁদের কাজ করার কথা তাঁদের নৈশপ্রহরীর কাজ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বীজ খামারে উন্নত মানের বীজ তৈরির কাজ। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ খামারে সেচের ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে বছরভর বীজ তৈরি করা যায় না। হাওড়া জেলার বীজ খামারগুলির এমনই অবস্থা।

Advertisement

জেলায় মোট পাঁচটি বীজ খামার রয়েছে। সেগুলি হল উলুবেড়িয়া ১, বাগনান ১, শ্যামপুর ২, আমতা ১ এবং উদয়নারায়ণপুর। সবগুলিই কৃষি দফতরের অধীনে। উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের বীজ খামারটিতে আবার বীজ তৈরির গবেষণার কাজ চলে। এইসব বীজ খামারে ধান, সূর্যমুখী, ডাল, সরিষা প্রভৃতির বীজ তৈরি হয়। যা চলে যায় রাজ্য বীজ নিগমে। নিগম তা চাষিদের কাছে বিক্রি করে। একেকটি বীজ খামারের অধীনে রয়েছে ২৫ একর জমি। তবে বছর তিনেক আগে বীজ খামারের জমিতেই কিসান মান্ডি তৈরি করায় জমির পরিমাণ কমে ২০ একরে দাঁড়িয়েছে।

সাতের দশকে গড়ে ওঠা এইসব বীজ খামারে এক সময়ে রমরমিয়ে বীজ উৎপাদন হতো। ক্রমে সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। জমির পরিমাণ কমার সঙ্গে কমেছে কর্মীর সংখ্যাও। কর্মীদের কাজ হল বীজ বোনার জন্য মাটি তৈরি থেকে শুরু করে ধান কাটা, ঝাড়া, আগাছা সাফ করা। একেকটি খামারে কর্মী থাকার কথা ১৫ জন করে। কিন্তু আছে তার তুলনায় অনেক কম। উলুবেড়িয়া ১-এ ১০, বাগনান ১-এ ৫, শ্যামপুর ২ তে ৯, আমতা ১-এ ৮ এবং উদয়নারায়ণপুর-১ ব্লকে আছেন ৪ জন কর্মী।

Advertisement

প্রতিটি খামারে দামী যন্ত্রপাতি, উৎপাদিত বীজ, সার প্রভৃতি থাকার জন্য একজন করে নৈশপ্রহরী থাকতেন। কিন্তু সম্প্রতি ওই নৈশ প্রহরীরা অবসর নিয়েছেন। বদলে চাষের কাজে যে সব কর্মী আছেন তাঁদের মধ্য থেকেই পালা করে একেকজনকে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ভাবে খামারে কাজের লোকের সংখ্যা আরও কমেছে।

ধান কাটার সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইরে থেকে কর্মী নিতে হয় বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধান কাটার সময় বাইরে থেকে কর্মী নিতে হয়। তাঁদের পারিশ্রমিক নগদে মেটাতে হয়। কিন্তু এ ভাবে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

শ্যামপুর ২, বাগনান ১, আমতা ১ এবং উদয়নারায়ণপুর—চারটি খামারে আবার জলের অভাব রয়েছে। শুধুমাত্র বর্ষার মরসুমেই বীজ তৈরির কাজ হয়। অথচ জলের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই এগুলিতে বীজ উৎপাদন করা যেত। উলুবেড়িয়া ১ ব্লকে বীজ গবেষণাকেন্দ্রে জলের সমস্যা নেই। এখানে সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে। ফলে বছরভর এখানে বীজ তৈরির কাজ চলে। বছরে ৬০ টন বীজ তৈরি হয় এখানকার বীজ গবেষণা কেন্দ্রে। বাকি খামারগুলিতে উৎপাদন এর অর্ধেক। যা জলের সুব্যবস্থা থাকলে বাড়ানো যেত বলে কৃষি দফতরের দাবি।

জেলা কৃষি দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, খামারগুলিতে কর্মী নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা বহুবার আবেদন জানিয়েছেন। জলের বন্দোবস্ত করতে বাগনান১, আমতা১, শ্যামপুর ২ এবং উদয়নারায়ণপুর খামারে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হবে। এর জন্য প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে।

তবে উলুবেড়িয়া বীজ গবেষণাকেন্দ্রে জলের সমস্যা না থাকলেও নিকাশির সমস্যা রয়েছে। ফলে বর্ষায় খামারে বীজ গবেষণাকেন্দ্রের জমিতে মাসের পর মাস জল জমে থাকে। তাতে ধান গাছের বেশ ক্ষতি হয়।

উলুবেড়িয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক সর্বেশ্বর মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতি বছর বর্ষার আগে আমরা পুরসভার কাছে নিকাশি নালা পরিষ্কার করার জন্য আবেদন জানাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এ বিষয়ে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাস খান বলেন, ‘‘নিকাশি নালাটি পাকাপাকিভাবে পরিষ্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement