প্রতীকী ছবি।
কী দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিলের ভাত খাওয়াবেন ভেবে পাচ্ছেন না আমতার উদং হাই অ্যাটাচড প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু পাড়ুই। আনাজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো সিলিন্ডার প্রতি রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে ৭৬ টাকা। কিন্তু বরাদ্দ বাড়ল কই?
তাই মিড-ডে মিল চালানোর দায়িত্ব থেকে ইতিমধ্যেই বিডিও-র কাছে অব্যাহতি চেয়েছেন পিন্টুবাবু। একই পথে হাঁটতে চাইছেন আরও অনেকে। এমনকি, বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষকদের একাংশ। পিন্টুবাবু ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সভাপতিও। তিনি বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলে টাকার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে আমরা কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করব। তার প্রস্তুতি চলছে।’’
সমস্যার কথা অজানা নয় মিড-ডে মিল প্রকল্পের জেলার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের। তিনি বলেন, ‘‘সমাধান আমাদের হাতে নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার।’’ কিন্তু সরকারের কবে টনক নড়বে, উঠছে সেই প্রশ্ন।
সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, মিড-ডে মিলে যথাসম্ভব পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে দিতে হবে ডিম। মাসে অন্তত একদিন মুরগির মাংস। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তরকারির ওজন হতে হবে ছাত্রপ্রতি ১০০ গ্রাম। চালও দিতে হবে একই পরিমাণে। অন্যদিকে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রপ্রতি চাল ও তরকারি দিতে হবে দেড়শো গ্রাম করে।
কিন্তু বরাদ্দ কত?
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রপ্রতি বরাদ্দ ৪ টাকা ৪৮ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রপ্রতি বরাদ্দ ৬ টাকা ৭১ পয়সা। এর মধ্যেই স্কুলগুলিকে কিনতে হয় জ্বালানি, আনাজ, ডিম, মাংস, ডাল, মশলা ও তেল। চাল দেয় সরকার। মিড-ডে মিলে আনাজ হিসেবে স্কুলগুলি আলু, বরবটি, ঝিঙে, বাঁধাকপি, পটল প্রভৃতি ব্যবহার করে। প্রায় প্রতিদিন দেওয়া হয় মুসুর ডাল।
সোমবার হাওড়ার বিভিন্ন বাজারে বাঁধাকপির দাম হয়েছে ৩৫ টাকা কেজি। আলু ২৩ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি। অন্য আনাজেরও দাম বেড়েছে। এই দামবৃদ্ধি চলছে এক সপ্তাহ ধরেই। ফলে, পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুলে মিড-ডে মিল চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
কী করছেন তাঁরা?
শিক্ষকদের মতে, প্রাথমিকের ছাত্রপিছু এখন খরচ হচ্ছে প্রায় ৬ টাকা। তার চেয়ে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য আরও বেশি। তাই কোথাও আনাজের বরাদ্দে কাটছাঁট করা হচ্ছে। কোথাও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। যাতে বরাদ্দ বেশি মেলে। কোথাও শিক্ষকেরাই বাড়তি টাকা ঢালছেন নিজেদের পকেট থেকে।
শ্যামপুরের খাজনাবাহালা হাই-মাদ্রাসায় প্রতিদিন আনাজের সঙ্গে ডাল দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ক’দিন ধরে ডাল বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘দামবৃদ্ধির সমস্যা মোকাবিলা নিয়ে প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তাঁরা যে ভাবে হোক চালিয়ে নিতে বলছেন।’’ বাগনানের দেউলগ্রাম মানকুর বাকসি হাইস্কুলে এ দিন বাদ দেওয়া হয়েছে ঝিঙে-পোস্ত। প্রধান শিক্ষক আবদুল হক বলেন, ‘‘খাবারে বৈচিত্র এবং পুষ্টি আনার জন্য আমরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সব আনাজ রান্না করতাম। ঝিঙে এবং পোস্ত— দু’টিরই দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় এ দিন মিড-ডে মিলে আলু-সয়াবিনের তরকারি করতে হয়েছে।’’