যত্নে: প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের (ইনসেটে) কাছে রাখা পুথি। —নিজস্ব চিত্র।
ভাষা না-জানায় তিনি পুথি পড়তে পারেন না। স্রেফ সংগ্রহের নেশায় আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে পুথি খুঁজে বেড়ান বছর বাহান্নর স্কুল শিক্ষক প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু ২৪ বছর ধরে পাঁচটি পুথি সংগ্রহ করে এখন ফাঁপরে পড়েছেন তিনি। সংরক্ষণ করবে কে?
যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে পুথিগুলির অক্ষর ক্রমশ অস্পষ্ট এবং পাতাগুলি মলিন হচ্ছে বলে ক্ষোভ গোঘাটের বেঙ্গাই হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক প্রদীপবাবুর। সরকারি উদাসীনতায় গ্রামবাংলার প্রচুর মূল্যবান পুথি নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে বলেও তাঁর অভিযোগ। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘অনেক আবেদনের পর ২০০৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি সম্পদ কেন্দ্র থেকে একবার বিশেষজ্ঞরা এলেও আর আসেননি। পুথিগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন দিশাও দেখাননি। কী ভাবে সেগুলি গবেষকদের কাজে লাগবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। পুথিগুলির গুরুত্ব কতটা তা-ও বুঝতে পারছি না।”
আরামবাগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রদীপবাবুর বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি খামারবেড় এলাকায়। ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন। অষ্টমঙ্গলায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তিনতলার চোরাকুঠুরিতে ছিন্ন-ময়লা কাপড়ে মোড়া পুথি নষ্ট হতে দেখে তিনি নিয়ে আসেন। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ বর্ধমান রাজার অধীনস্থ পণ্ডিত ছিলেন। সেই শুরু। তারপর থেকে গোঘাট, খানাকুল, আরামবাগ, পুরশুড়ার বিভিন্ন গ্রামে পুথির সন্ধান শুরু করে এখনও পর্যন্ত পাঁচ-ছ’শো পাতার পাঁচটি পুথি সংগ্রহ করেছেন প্রদীপবাবু। শেষটি বছর তিনেক আগে উদ্ধার হয় গোঘাটের রঘুবাটি গ্রাম থেকে।
পাঁচটির মধ্যে তিনটি শনাক্ত করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি সম্পদ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। সেগুলি হল— ‘ভাগবত মহাপুরাণম্’, ‘ভাগবত পুরাণম্’ এবং ‘রামায়ণম্ (সুন্দর কাণ্ডম্)। প্রদীপবাবুর দাবি, তিনটি পুথি ৩৫০-৪০০ বছরের পুরনো বলে ওই বিশষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়লের পুথি বিশেষজ্ঞ তথা রাষ্ট্রীয় পুথি সমীক্ষা অভিযান কর্মসূচির রাজ্য প্রকল্প সঞ্চালক রত্না বসু বলেন, “ওই শিক্ষকের সংগ্রহের বাকি দু’টি পুথিও নিশ্চয়ই শনাক্ত করা হবে। ওঁকে পুথি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। নিজে সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রশিক্ষণও দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আবার তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুথি দানও করতে পারেন।’’
প্রদীপবাবু মনে করছেন, মহকুমার প্রাচীন গ্রামগুলিতে নিশ্চিত ভাবে আরও পুথি মিলবে। কিন্তু পূর্বপুরুষের স্মৃতি হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকে। সেগুলিরও খোঁজ নিয়ে সরকারি তালিকাভুক্ত এবং চিহ্নিত করার পর সেগুলি সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।