স্কুলেই বিয়েবাড়ির আসর, প্রশ্নে কর্তৃপক্ষ

ক্লাস চলছে। কিন্তু পড়াশোনায় মন নেই ছাত্রদের। গোটা স্কুল ভরে গিয়েছে মাংস কষানোর গন্ধে। মাঝেমাঝেই কানে আসছে গরম তেলে মাছ ভাজার শব্দ। আর মন থাকে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৯
Share:

বিতর্ক: স্কুলভবনের একাংশে চলছে বিয়েবাড়ির প্রস্তুতি। সোমবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ক্লাস চলছে। কিন্তু পড়াশোনায় মন নেই ছাত্রদের। গোটা স্কুল ভরে গিয়েছে মাংস কষানোর গন্ধে। মাঝেমাঝেই কানে আসছে গরম তেলে মাছ ভাজার শব্দ। আর মন থাকে? আসলে স্কুলেই চলছে বিয়েবাড়ি। স্কুলের বারান্দা হয়ে গিয়েছে রান্নাঘর। সেখানেই গ্যাসের আগুনে চলছে প্রায় পাঁচশো অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থাপনা। হচ্ছে রকমারি রান্নাবান্না।

Advertisement

সোমবার এমনই ঘটেছে হাওড়া ময়দান সংলগ্ন শতাব্দী প্রাচীন স্কুল অক্ষয় শিক্ষায়তনে। হাওড়া শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, দফতরে না জানিয়েই এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ছেলের বৌভাতের জন্য গোটা স্কুলবাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই খবর কানে যেতেই পুলিশ পাঠিয়ে প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠায় জেলা শিক্ষা দফতর। তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে ভুল স্বীকার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল সূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষের অনুমতিতেই সেখানকার দারোয়ান গৌতম দাস দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে স্কুলের ভিতরেই একটি ঘরে থাকেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ছেলের বৌভাতের জন্য স্কুলটি ১৭ তারিখ সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ব্যবহারের আবেদন জানান গৌতমবাবু। অর্থাৎ, স্কুলের সময়ের বাইরেই হওয়ার কথা বিয়েবাড়ি। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে রীতিমতো কমিটি বৈঠকে রে়জ়লিউশন পাশ করে তাঁকে বৌভাতের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেন।

Advertisement

এর পরেই গত ১৫ তারিখ ওই স্কুলের ভিতরে বেজে ওঠা শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে বিয়ে করতে যান গৌতমবাবুর পুত্র। পরদিনই গোটা স্কুল সেজে ওঠে এলইডি আলোয়। স্কুলের মাঠে রীতিমতো ম্যারাপ খাটিয়ে তৈরি হয় অতিথি আপ্যায়নের জায়গা। ওই প্যান্ডেলের পাশেই একটি বড় শ্রেণিকক্ষ থেকে টেবিল-চেয়ার সরিয়ে তৈরি হয় কনে বসার জায়গা। আলোয় ভরিয়ে দেওয়া হয় স্কুল প্রাঙ্গণ।

এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, স্কুলের দোতলায় ক্লাস চললেও নীচে সমান তালে চলছে বিয়েবাড়ি। বারান্দায় তৈরি হওয়া রান্নাঘরে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে চলছে রাতের ভোজের প্রস্তুতি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেদান্তবিহারী পোদ্দার বলেন, ‘‘গৌতমবাবুর সদ্য ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। তিনি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারেন না। তাই ওঁর আবেদন ফেলতে পারেনি স্কুলের পরিচালন কমিটি। তবে এটা যে ভুল হয়েছে, তা বুঝতে পারছি।’’ স্কুলে বিয়েবাড়ি করা যে অন্যায়, তা ভাবেননি গৌতমবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘আমি যেহেতু অসুস্থ, তাই দোতলা বাড়ি ভাড়া নিতে চাইনি। ভাবিনি স্কুলে বিয়েবাড়ি করলে এমন সমস্যা হবে।’’

স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘যে হেতু স্কুলটি নিজস্ব জমিতে গড়ে উঠেছে এবং স্কুলের নিজস্ব পরিচালন কমিটি রয়েছে, তাই জেলা স্কুল দফতরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করিনি।’’ প্রতাপবাবুর বক্তব্য, স্কুলটি তো বন্ধ করা হয়নি। ক্লাস চালু রেখে বিয়েবাড়ির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মাঠ ছাড়া আর কোনও জায়গাই ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি।

প্রতাপবাবু এ কথা বললেও স্কুলের পরিবেশ অন্য কথাই বলছে। উপরে দু’-একটি ক্লাস হলেও নীচের তলার সব ক্লাস বন্ধ রেখে বিয়েবাড়ির জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। একটি ক্লাসের চেয়ার-টেবিল সরিয়ে সাজানো হয়েছে কনে বসার জায়গা। তিনতলার হলঘরে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন বর-কনের থাকার ও আত্মীয়দের বসার জায়গা। হাওড়ার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শান্তনু সিংহ বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরেই প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়েছি। কোনও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে এ ভাবে বিয়েবাড়ি করার জন্য অনুমতি দেওয়া যায় না। কেন দেওয়া হয়েছে, তা লিখিত ভাবে জানাতে বলেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement