—ফাইল চিত্র।
হওয়ার কথা ছিল পুরোদস্তুর প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক। কিন্তু তাল কাটল ঝগড়ায়। এক পক্ষে ভূমিকর্তা, অন্য পক্ষে পুলিশকর্তা। বিষয়— দামোদরের বুক থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা।
বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতের সমরুক শীতলচন্দ্র ইন্সটিটিউটে ওই পর্যালোচনা বৈঠকে যে ঝগড়াও শুনতে হবে কে ভেবেছিলেন? প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়। তাঁর অভিযোগ, উলুবেড়িয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দামোদরের বুক থেকে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। অথচ ব্লক ভূমি দফতর নীরব দর্শক। বালি তোলার ফলে পাড় ধসে যাচ্ছে। চাষের জমি নষ্ট হচ্ছে। বাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম। এই জেলায় নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ হলেও উলুবেড়িয়ায় অবাধে চলছে।
আর পায় কে? ব্লক ভূমি দফতরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন উলুবেড়িয়া থানার আইসি কৌশিক কুণ্ডু, ‘‘বালি তোলার বিরুদ্ধে ব্লক ভূমি দফতরকেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে হয়। কিন্তু এই দফতর তা করে না। বছরখানেক আগে মহকুমাশাসকের নির্দেশে আমরা অভিযান চালিযে কিছু যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করি। বারবার বলার পরে ওই দফতর দু’দিন বাদে অভিযোগ করে। দেরি করে অভিযোগ হলে মামলার গুরুত্ব কমে যায়।’’
ব্লক ভূমিকর্তা সুমন পালের দাবি, ‘‘আমরা বহুবার অভিযোগ করেছি। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’’
আইসি-র পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কার কাছে অভিযোগ করেছেন? কবে? আমরা বার বার বলা সত্ত্বেও আপনারা বালি-চোরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের না-করায় আমরা নিজেরাই চার দিন আগে ফের অভিযান চালিয়েছি।’’
সুমন—‘‘গত এক বছরে ৩২টি অভিযোগ করেছি পুলিশের কাছে। আপনি বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন। কোনও অভিযোগের ক্ষেত্রেই আপনারা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা আর পুলিশের কাছে অভিযোগ করি না।’’
আইসি—‘‘৩২টি অভিযোগ করেছেন? এটা প্রমাণ করতে পারবেন? আমি চ্যালেঞ্জ করছি।’’
জেলাশাসক মুক্তা আর্য হস্তক্ষেপ না-করলে হয়তো বচসা আরও চলত। তিনি বৈঠকে হাজির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এবং জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে বালি-চোরদের ধরতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। দু’টি দফতরের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতেও বলেন তিনি। এ দিনের প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে উন্নয়মূলক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতদিন পর্যন্ত এই ধরনের বৈঠক হত ব্লকে বা জেলাশাসকের দফতরে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো রাজ্যে এমন বৈঠক এই প্রথম বলে নবান্ন সূত্রের খবর।