ক্রেটে করে কিছু আলু বাইরেও রাখা আছে।—নিজস্ব চিত্র
ডাঁই করা বস্তা, প্লাস্টিকের ক্রেটে থরে থরে আলু।
কোনওটা পচে গিয়েছে, কোনওটা থেকে কল বেরিয়ে গিয়েছে, কোনওটা ফাটা।
বৃহস্পতিবার সিঙ্গুরের তাপসী মালিক কৃষক বাজারে এমনই আলু নিলাম করা হল রাজ্য সরকারের তরফে। আলুর চেহারা দেখে নিলামের দর ওঠা দূরঅস্ত, বরং তা নেমে গেল।
ব্যবসায়ীদের দাবি, কম দামে হলেও নিম্নমানের ওই সরকারি আলু তাঁরা কেনায় সরকারের মুখরক্ষা হল। একইসঙ্গে তাঁদের ক্ষোভ, কিছু দিন আগে আলুর দাম যখন প্রায় হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছিল, তখন এই আলু বাজারে ছাড়লে মানুষের কিছুটা সুরাহা হত। এ ভাবে ‘অভাবী বিক্রি’ করতে হত না সরকারকে। এখনও যে পরিমাণ আলু রয়ে গিয়েছে, তার অবস্থা কেমন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। সরকারি দফতরের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, সঠিক সময়েই আলু ছাড়া হয়েছে। হিমঘরে বেশি পরিমাণ আলু মজুত নেই।
সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন প্রায় ৬০০ কুইন্টাল (১২০০ প্যাকেট) আলু নিলাম করা হয়। সর্বনিম্ন মূল্য ধার্য করা হয় কেজিপ্রতি ১২ টাকা। নিলামে খুব অল্প লোকজন এসেছিলেন। আলুর চেহারা দেখে তাঁদের চোখ কপালে উঠে যায়। কাটা, ফাটা, কল বেরিয়ে যাওয়া ওই আলু ১২ টাকা কেজি দরে কেনা সম্ভব নয় বলে তাঁরা জানিয়ে দেন। তখন ১০২০ টাকা কুইন্টাল অর্থাৎ ১০ টাকা ২০ পয়সা কেজি দরে অসিতকুমার বাড়ুই নামে এক ব্যবসায়ী ওই আলু কেনেন।
রতনপুর মোড় আলু ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক প্রহ্লাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘আলুর মান খুব খারাপ ছিল। পচাও ছিল। আমরা না নিলে সরকার এই আলু বাজারে বেচতে পারত না।’’
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বাজারে যখন আলুর দাম চড়েছিল, তখন এই সরকারি আলু বের করা উচিত ছিল। তখন এই আলু জমিয়ে রাখা হয়েছিল। আখেরে তা নষ্ট হয়ে গেল। ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ— কারও কোনও কাজে এল না। ওই আলু ঝাড়াই-বাছাই করে ‘কাটপিস’ বা ছাঁটআলু হিসেবে জলের দরে বিক্রি করতে হবে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।
সরকারি দফতরের আধিকারিকরা খারাপ আলুর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। উল্টে, আলুর দাম কমে যাওয়ার কৃতিত্ব দাবি করছেন তাঁরা। হুগলি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সচিব শেখ ফিরদোসুর রহমান বলেন, ‘‘মজুত করে রাখা হয়নি। দাম বেড়ে যাওয়ার সময় জেলার ১৪২টা জায়গা থেকে ২৫ টাকা কেজি সরে সরকারি আলু বিক্রি করা হয়েছে। যেটুকু রয়ে গিয়েছিল, তাই নিলাম করা হচ্ছে। আর খুব একটা আলু জমে নেই।’’ এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারও দাবি করেছিলেন, সরকারি আলু সঠিক সময়ে বের করা হয়েছিল বলেই বাজারে আলুর দাম কমেছে।
সরকারি আধিকারিকরা যা-ই বলুন, সরকারি আলু কেন ছাড়া হচ্ছে না, সেই সময়েই প্রশ্ন উঠেছিল। নিলামে ‘পচা’ আলু দেখে সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। সরকারের ব্যর্থতাতেই আলুর দাম নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল, এই অভিযোগে বিজেপির লোকেরা এ দিন তাপসী মালিক কৃষক বাজারের সামনে বিক্ষোভ দেখান। সিঙ্গুরের বুড়িগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে এসে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আলু নিয়ে টাকা লুট করে নির্বাচনী তহবিল করা হয়েছে। এখন আলুর দাম নেই বলে আলু নিলাম করতে বাধ্য হচ্ছে।’’
এ ব্যাপারে তৃণমূলের কৃষক নেতা তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিলীপবাবুরা ভোটপাখি। সামনে ভোট আছে। তাই কিছু না জেনে পাগলের প্রলাপ বকছেন।’’