নবরূপে: সেজে উঠেছে রবীন্দ্র ভবন। নিজস্ব চিত্র
চার দিকে ঘুর়ত ভাম। শৌচালয়ে দেখা মিলত সাপের। ছেঁড়া দর্শকাসনে বসে ছারপোকার কামড়ও খেতে হত দর্শকদের। তাপ্পি দেওয়া স্ক্রিন ভেদ করে বেরোত প্রোজেক্টরের আলো।
দীর্ঘদিন এমন বেহাল হয়ে থাকার পরে পুনরায় সংস্কার করে বালি রবীন্দ্র ভবন প্রেক্ষাগৃহ চালু করল হাওড়া পুরসভা। এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। প্রায় আট মাস ধরে সংস্কারের কাজ চলার পরে সম্প্রতি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ৩৯ বছরের পুরনো প্রেক্ষাগৃহ।
হাওড়া শহরের দু’প্রান্তে রয়েছে পুরসভা পরিচালিত দু’টি প্রেক্ষাগৃহ। যার একটি হাওড়া ময়দানের শরৎ সদন, অন্যটি বালি রবীন্দ্র ভবন। আগে রবীন্দ্র ভবন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বালি পুরসভা। ২০১৫ সালে হাওড়ার সঙ্গে বালি পুরসভার যুক্ত হয়ে যায়। এর পরেই হাওড়ার পুরকর্তারা প্রেক্ষাগৃহ পরিদর্শন করে দেখেন, জতুগৃহ ও ভগ্নপ্রায় ভবনে পরিণত হয়েছে সেটি। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অনুমোদন ও আর্থিক সহায়তায় ২০১৮ সালের শেষ থেকে রবীন্দ্র ভবন সংস্কার শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকারই মানুষ সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভেবে তৎকালীন বালি পুরসভার চেয়ারম্যান পতিতপাবন পাঠক তাঁদের খরচে রবীন্দ্র ভবন বানিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বালির বাসিন্দা আইনজীবী রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায় জমিটি দান করেন বালি পুরসভাকে। ১৯৮০ সালের ৯ মার্চ ওই প্রেক্ষাগৃহের শিলান্যাস করেন বিধানসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ সৈয়দ আবুল মনসুর হবিবুল্লা। বালির থানার কাছে জিটি রোডের উপরে প্রায় পাঁচ কাঠা জমির উপরে ওই প্রেক্ষাগৃহ। শিলান্যাসের দশ বছর পরে ১৯৯০ সালের রবীন্দ্র ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
একটা সময়ে নাট্যোৎসব, সিনেমা উৎসব, শিল্পী মেলা-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত সেখানে। রঞ্জিতবাবুর ছেলে রাজ্যের প্রাক্তন অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রবীন্দ্র ভবন হল বালির সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। প্রেক্ষাগৃহের সামনের অংশেই রয়েছে বালি সাধারণী সভার ফুলের বাগিচা। জীর্ণ দশা কাটিয়ে ফের নতুন ভাবে প্রেক্ষাগৃহ চালু হওয়া খুবই দরকার ছিল।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, বালির ওই প্রেক্ষাগৃহের এক নম্বর হলে মোট আসন রয়েছে ৬১৬টি। আর তিনতলায় রক্তকরবী মঞ্চে (সেমিনার হল) ১০২টি আসন রয়েছে। দর্শকদের জন্য বিশেষ বসার আসন রয়েছে। মোট ১০ হাজার লিটার জলের
ট্যাঙ্ক, নতুন জলাধার-সহ রয়েছে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। এক নম্বর হলে ৪০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া মঞ্চ নতুন করে বানানো হয়েছে। বদলানো হয়েছে মূল ফটক, সীমানা পাঁচিলও। সেখানে কংক্রিটের জাফরি সরিয়ে বসানো হয়েছে নকশাকাটা লোহার প্লেট। গোটা প্রেক্ষাগৃহই শীতাতপ নিয়ন্ত্রত হওয়ার পাশাপাশি দেওয়ালগুলি আধুনিক মানের শব্দরোধী ব্যবস্থায় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে ও বাইরে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের এলইডি আলো।