বাউড়িয়ার একটি জুটমিল থেকে বেরোচ্ছেন কর্মীরা। ছবি: সুব্রত জানা
সামনে পুলিশ। ফাঁকা পিচরাস্তায় ডন দিচ্ছেন দুই যুবক!
প্রাত্যহিক শরীরচর্চা নয়, লকডাউনে রাস্তায় বেরিয়ে বৈদ্যবাটীর চৌমাথায় এ ভাবেই গা ঘামিয়ে বাড়ি ফিরতে হল দুই যুবককে। বিধি ভাঙার এমন বিচ্ছিন্ন কিছু উদাহরণ এ দিন সামনে এলেও মোটর উপর এ বারও লকডাউন সফল দুই জেলাতেই। রাস্তাঘাট শুনশান। দোকানপাটে তালা।
আগের লকডাউনে অকারণে রাস্তায় বেরনো বা মাস্ক না-পরায় পুলিশকে কান ধরতে ওঠবস করাতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের এই ‘অতি সক্রিয়তা’য় নানা মহলে সমালোচনা হয়। এ দিনও বিধি ভাঙায় কিছু এলাকায় পুলিশকে সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে দিতে বা ওঠবস করাতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বৈদ্যবাটী-চৌমাথায় ব্যায়াম করানোর মতো ‘সাজা’ দেওয়ার কথা অবশ্য পুলিশ মানেনি।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, দুই যুবক সাইকেলে যাচ্ছিলেন। এক জনের মুখে মাস্ক ছিল না। অপর জনের থুতনির নীচে নামানো ছিল। বেরনোর কারণও তাঁরা যথাযথ দিতে পারেননি। ভুল স্বীকার করে তাঁরা কান ধরে ওঠবস করতে গেলে পুলিশই নিষেধ করে। তখন তাঁরা নিজেরাই বার কয়েক ‘ডন’ দেন। এক পুলিশকর্মী অবশ্য বলেন, ‘‘ট্রেনিংয়ের সময় আমরা ভুল করলে এ ভাবেই শাস্তি দেওয়া হত।’’
লকডাউন সফল করতে জেলা জুড়ে পুলিশ চষে বেরিয়েছে। লকডাউনের নিয়ম ভাঙায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন।
সকালে পান্ডুয়ার তেলিপাড়ায় একটি অটো থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় পুলিশ। তেলিপাড়াতেই কয়েক জনকে কান ধরে ওঠবস করানো হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশের দাবি, আইনি পদক্ষেপ এড়াতে গ্রামবাসীরাই ভুল স্বীকার করে ওঠবস করেন। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানিয়েছেন, বিধি ভাঙায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরামবাগ মহকুমাও ছিল শুনশান।
একই ছবি হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনান, শ্যামপুর, আমতা-সহ সর্বত্রই। মুম্বই রোডে গাড়ি ছিল না বললেই চলে। উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় বাড়ির বাইরে না-বেরনোর জন্য পুলিশ মাইকে প্রচার করা হয়।
বাউড়িয়ার দু’টি এবং হুগলির সব ক’টি জুটমিল অবশ্য আগের মতো খোলাই ছিল। ঢোকা-বেরনোর সময় দূরত্ববিধি না-মানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অনেকের বক্তব্য, শ্রমিকদের একত্রে মিলে ঢোকা-বেরনোর ব্যবস্থার বদল করা উচিত। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছু সংখ্যক শ্রমিক যাতে কাজে যোগ দিতে পারেন এবং সে ভাবেই যদি তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে। বাউড়িয়ায় অনেক শ্রমিকের মুখেই মাস্ক ছিল না।