হাওড়ায় জেজেবি-র দুই সদস্য নেই, থমকে রয়েছে বিচার প্রক্রিয়া

হাওড়ায় গত মার্চ মাস থেকে বিচারকমণ্ডলীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন একজন মাত্র বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

আইন বলছে, নাবালক অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। যাতে তারা জীবনের মূল স্রোতে তাড়াতাড়ি ফিরতে পারে। কিন্তু আট মাস ধরে হাওড়া জেলায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের (জেজেবি) দুই সদস্যই নেই। ফলে, জমে থাকা বহু মামলার নিষ্পত্তিই হচ্ছে না।

Advertisement

১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অপরাধীদের বিচার সাধারণ আদালতে হয় না। ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী তাদের বিচারের জন্য প্রতিটি জেলায় একটি করে জেজেবি আছে। এটি একটি বিচারকমণ্ডলী। এর চেয়ারম্যান একজন প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। থাকেন আরও দুই সদস্য, যাঁদের সমাজকল্যাণমূলক কাজে অবদান রয়েছে। তাঁদের নিয়োগ করে সমাজকল্যাণ দফতরই। যাবতীয় বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তিন সদস্যের ওই বিচারকমণ্ডলী। তিন জনের সম্মতিতে মামলার চূড়ান্ত রায় হয়। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী অভিযুক্তদের ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

কিন্তু হাওড়ায় গত মার্চ মাস থেকে বিচারকমণ্ডলীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন একজন মাত্র বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। তিন বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বাকি দুই সদস্য নেই। নতুন নিয়োগও হয়নি। ফলে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। প্রায় ২০০ মামলা জমে রয়েছে। এমনকী, মার্চ মাসের আগে থেকে যে সব মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা-ও থমকে গিয়েছে। বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট শুধুমাত্র নাবালক অপরাধীদের জামিন দেওয়া বা বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর কাজটুকুই করতে পারছেন। যে সব নাবালককে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়, তাদের জয়পুরের পারবাকসিতে একটি হোমে রাখা হয়। নাবালিকাদের পাঠানো হয় লিলুয়া হোমে। জামিন পাওয়ার পরে তারা নিজের বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়ায় তারা স্বস্তি পায় না।

Advertisement

সমস্যার কথা মানছে রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর। দফতরের এক কর্তা জানান, হাওড়ায় জেজেবি-র দুই সদস্যের নির্বাচন চূড়ান্ত করা হয়েছে। শীঘ্র বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া জেলায় মাসে গড়ে ১০ জন করে নাবালক বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পকেটমারি থেকে শুরু করে চুরি, চুরিতে পাকা অপরাধীদের সহায়তা করা, ধর্ষণ, এমনকি খুনের অভিযোগেও ধরা পড়ে অনেকে। কিন্তু শুধু জামিন পাওয়া বা বিচারবিভাগীয় হেফাজতে যাওয়া ছাড়া মার্চ মাস থেকে মামলা গতি পাচ্ছে না বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায়।

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-হলে কোনও অভিযুক্ত নিরপরাধ হলেও ছাড় পাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, কারও যদি সাজাও হয়, সে ক্ষেত্রে যত দেরি করে তার সাজা ঘোষণা হবে, সাজার মেয়াদ শেষ হলে খালাস পেতেও তার দেরি হবে।

খালাস পাওয়া বা সাজা ঘোষণা— দু’টি ক্ষেত্রেই বিচারে দেরি হওয়ার অর্থ হল জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও দেরি হওয়া। সেই কারণেই অপরাধে জড়িয়ে পড়া নাবালক-নাবালিকাদের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার শেষে করতে বলা হয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস আইনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement