হরিপালে জখম তৃণমূল কর্মী হেমন্ত সাঁতরা। আরামবাগের পূর্ব কৃষ্ণপুরে তৃণমূল নেতার বাড়ি ভাঙচুর। ছবি: মোহন দাস।
বিরোধীদের উপর আক্রমণের অভিযোগ তো রয়েইছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলের লোকদের উপরেও হামলা নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত গোটা হুগলি জুড়েই বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীদের উপরে শাসক দলের হামলার অভিযোগ যেমন শোনা গিয়েছে, তেমনই তৃণমূলের হাতে তৃণমূলের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
শ্রীরামপুর, হরিপাল, তারকেশ্বর থেকে বদনগঞ্জ ও আরামবাগ সর্বত্রই গণনা পরবর্তী গোলামালের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি।
তারকেশ্বরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর নতুন নয়। ভোটের পরেও দলের জেলা নেতৃত্ব যে তাতে রাশ টানতে ব্যর্থ তারই ফের প্রমাণ মিলল। শনিবার রাতে তারকেশ্বরের রামনগর গ্রামে নৈশ ক্রিকেটের আসর বসেছিল। দলীয় সদস্য বৈদ্যনাথ ধাড়া খেলা দেখছিলেন। অভিযোগ, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দলেরই চার কর্মী তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে। বৈদ্যনাথবাবুর অভিযোগ, মারের চোটে তাঁর মাথা ফেটে যায়। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে ফেলে হামলাকারীরা পালায়। পরে তাঁকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ধনেখালির চৈতন্যবাটিতে দলেরই এক গোষ্ঠীর হাতে দুই তৃণমূল কর্মী বেধড়ক মার খান বলে অভিযোগ। প্রহৃত মানিক দলুই এবং কার্তিক পাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
হরিপালের পাঁচগাছিয়ায় শনিবার রাতে এক তৃণমূল কর্মীর উপর হামলা হয়। হেমন্ত সাঁতরা নামে ওই ব্যক্তি ভোটে স্থানীয় বুথে তৃণমূলের এজেন্ট ছিলেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কয়েক জন লোক ডাকলে তিনি বাড়ি থেকে বেরোতেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর পেটে, বুকে, গলায় আঘাত করা হয়। রবিবার সকালে শ্রীরামপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তারাপুকুরে তাদের একটি দলীয় কার্যালয়ে স্থানীয় কাউন্সিলার উত্তম রায় দলবল নিয়ে ভাঙচুর চালায় বলে সিপিএমের অভিযোগ।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলের কর্মীরা সংযত আছেন। সেই সুযোগে সিপিএম আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। পুলিশকে বলা হয়েছে, দোষীদের ধরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।’’ সিপিএম নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের উপরে যে সব হামলা হচ্ছে, সবই তাদের গোষ্ঠীকোন্দলের জের।
আরামবাগে সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপর শাসক দলের সন্ত্রাস চলছেই। বিজেপি কর্মীরাও কয়েক জায়গায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। রবিবার সকালে আরামবাগের সাতমাস, হিয়াতপুর, শেখপুর গ্রামে ৫০টি সিপিএম সমর্থক-কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে মহিলা-পুরুষদের নির্বিচারে পেটানো হয়েছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। হিয়াতপুরে দুই সিপিএম কর্মীর চালাঘরে আগুন লাগানো হয়। শনিবার রাতে আরামবাগের সিপিএম প্রার্থী অসিতকুমার মালিকের গ্রামের বাড়ি ভাঙচুর হয়। গোঘাটের বদনগঞ্জের হাটপুকুরে রামপদ মালিক নামে এক সিপিএম কর্মীকে মারধর ও ছুরি দিয়ে কোপানোর ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল কর্মী তারক সাহাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরামবাগের পূর্ব কেশবপুরে বিজেপির পোলিং এজেন্ট হওয়ার অপরাধে মধুমিতা বেরা নামে এক কর্মীকে শনিবার রাতে মারধর করা হয়। পূর্বকৃষ্ণপুরে পার্থ হাজারি নামে এক তৃণমূল নেতার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তাঁর অভিযোগ, “দলেরই একটা অংশ দুর্নীতিতে যুক্ত। তাদের বাধা দিয়েছিলাম। তাই ভোটে জেতার পর আমার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এই কাণ্ড করেছে। দলীয় নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি।”