বিপজ্জনক: অভিযান শুরু হলেও শনিবার দাদপুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল একটি ট্রাককে।ছবি: তাপস ঘোষ
ছবিটা অনেকটা বদলে গেল ২৪ ঘণ্টায়।
শনিবার সকাল থেকে হুগলিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে আর সে ভাবে সার দিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল না। ডানকুনিতে পুলিশ জরিমানা করল। নজরদারিও চলল। যা দেখে গাড়ি-চালকদের অনেকেই মনে করছেন, দেরিতে টনক নড়ল পুলিশ প্রশাসনের। এই তৎপরতা বছরভর থাকলে দুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
শুক্রবার ভোরে ওই সড়কের দাদপুরে এক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর গাড়ির চালক ও দেহরক্ষীর। দেবশ্রীর গাড়ি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালিবোঝাই ট্রাকে ধাক্কা মারে। ট্রাকটির চাকা ফেটে গিয়েছিল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ। দুর্ঘটনার পরেই অবশ্য ট্রাকটিকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ওই দুর্ঘটনার পরেই চুঁচুড়ায় এসেছিলেন রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। তাঁদের মধ্যে এই জেলারই এক প্রাক্তন পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, বালির ট্রাকটি যদি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত, তা হলে এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাটি হয়তো এড়ানো যেত।
ফলে, দুর্ঘটনার পরেই যে ট্রাক সরানো গেল, তা কেন আগের ১৩ ঘণ্টায় হল না, স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্ন উঠছে। তা ছাড়া, ট্রাকটি যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেই জায়গা ‘গার্ডরেল’ দিয়ে ঘিরে রাখা বা সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করার মতো উদ্যোগও কারও চোখে পড়েনি।
জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসুর দাবি, ‘‘ট্রাক খারাপ হলে সব সময়ই পুলিশের পক্ষ থেকে টায়ার, গাছ বা লাল কাপড় দিয়ে অন্য গাড়িকে সতর্ক করার ব্যবস্থা থাকে। এ ক্ষেত্রে গাছ দেওয়া ছিল। দুর্ঘটনার পরে ওই ট্রাকটিকে শক্তিশালী ক্রেন এনে সরানো হয়। দীর্ঘ হাইওয়েতে প্রতিটি ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের পক্ষে তা সম্ভব নয়।’’
‘মরণফাঁদ’ হয়ে ওঠা ওই জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা রোধে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বহু গাড়ি-চালক এবং সাধারণ যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তার জন্য মোটা টাকা ‘টোল’ নেয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষই। অথচ, তাদের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর ব্রেক-ভ্যান রাখা বা অ্যাম্বুল্যান্সের কোনও ব্যবস্থাই করা হয় না। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপরেও বর্তায়।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকলল্প অধিকর্তা স্বপনকুমার মল্লিক অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাকে একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে যা যা পদক্ষেপ করা দরকার তা করা উচিত। নতুন ভাবনার সুযোগ আছে। এই কাজ রাজ্য পুলিশ বা অন্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবেও করা সম্ভব। পথ নিরাপত্তা নিয়ে আমরা নিয়মিত জেলা পুলিশ ও চন্দননগর কমিশনারেটের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করি। সব দিক খোলা রেখেই আমরা ভবিষ্যতে আলোচনা করব।’’
এ দিন সকাল থেকেই ওই সড়কে নজরদারি চালানো শুরু করে জেলা পুলিশ এবং চন্দননগর কমিশনারেট। ফলে, সিঙ্গুর, দাদপুর, পোলবা, ডানকুনি-সহ বেশির ভাগ জায়গাতেই সে ভাবে ট্রাক দাঁড়াতে দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও দু’একটি করে ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল।