দিন কাটল আদরের ‘লালু’র চিন্তাতেই

সকাল থেকেই বেশ চিন্তায় থানার রাশভারী বড়বাবু। লালুর আজ অস্ত্রোপচার। তাই খালি পেটে রাখতে হয়েছে তাকে। জল ছাড়া কিছুই দেওয়া হয়নি। অস্ত্রোপচারের পরেও লম্ফঝম্প চলবে না। বিশ্রামে রাখতে হবে। কিন্তু সাত মাসের খুদে তো কোনও কথাই শোনে না। এমনকী, দুঁদে ওই অফিসারকেও মাঝেমধ্যে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দেয়!

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০১:০৩
Share:

অস্ত্রোপচারের টেবিলে। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকেই বেশ চিন্তায় থানার রাশভারী বড়বাবু।

Advertisement

লালুর আজ অস্ত্রোপচার। তাই খালি পেটে রাখতে হয়েছে তাকে। জল ছাড়া কিছুই দেওয়া হয়নি। অস্ত্রোপচারের পরেও লম্ফঝম্প চলবে না। বিশ্রামে রাখতে হবে। কিন্তু সাত মাসের খুদে তো কোনও কথাই শোনে না। এমনকী, দুঁদে ওই অফিসারকেও মাঝেমধ্যে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দেয়!

এক দিকে প্রতিদিনের মতো থানার যাবতীয় কাজ সামলানো, তার উপরে লালুর এই অস্ত্রোপচারকে ঘিরেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে ছিল হাওড়া সিটি পুলিশের নিশ্চিন্দা থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জীব সরকারের। শেষমেশ থানায় এলেন চিকিৎসক। থানার ভিতরের বারান্দায় রীতিমতো অচৈতন্য করে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলল লালুর কানের অস্ত্রোপচার।

Advertisement

লালু হল সাত মাসের এক কুকুর ছানা। বালির নিশ্চিন্দা থানার এ দিক-ও দিকেই তার আস্তানা। তবে শুধু লালু নয়, সঙ্গে রয়েছে তার বোন কাল্টি আর মা রানিও। বেশ কয়েক দিন ধরেই সাত মাসের ওই কুকুর ছানার ডান কানের পাশে হেমাটোমা (রক্ত জমাট বেঁধে থাকা) হয়েছিল। দিনরাত যন্ত্রণায় ছটফট করত সে। শেষে চিকিৎসককে ডেকে দেখানো হয় লালুকে। তিনিই নিদান দেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য কোনও গতি নেই। সেই মতো এ দিন থানার ভিতরেই ওই সারমেয়র অস্ত্রোপচার হল।

মাস সাতেক আগে সঞ্জীববাবু নিশ্চিন্দা থানার দায়িত্বে আসার পরে রানি থানার ভিতরেই এক ঘরের কোণে চার ছানার জন্ম দেয়। তবে কয়েক দিন পরেই মারা যায় এক ছানা। আর একটিকে পথচলতি এক জন নিয়ে চলে যান। থেকে যায় বাকি দু’টি। সঞ্জীববাবু প্রথম দিকে শুধু বিস্কুট খাওয়াতেন ওই কুকুর ছানাদের। কিন্তু দিন যত এগিয়েছে, ততই সখ্য বেড়েছে পুলিশ ও কুকুর ছানার। সঞ্জীববাবুই এক সময়ে ওই ভাই-বোনের নাম দেন। তাঁকে দেখলেই তাঁর পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায় লালু ও কাল্টি।

থানার অন্যান্য পুলিশকর্মীদের কথায়, ‘‘লালু বড়বাবুকে খুব ভালবাসে। উনি যখন গাড়িতে করে কোথাও যান, তখন লালু সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। না ফেরা পর্যন্ত থানার বাইরে বড়বাবুর গাড়ি রাখার জায়গায়তেই ঠায় বসে থাকে।’’ প্রতিদিন দুপুরে সঞ্জীববাবু না খাওয়া পর্যন্ত মুখে খাবার তোলে না লালু। বড়বাবুর ঘরের দরজার সামনেই বসে থাকে। বেতনের টাকা থেকেই প্রতিদিন সারমেয়দের জন্য সকালে চার প্যাকেট বিস্কুট, দুপুরে ভাত, মাছের ঝোল বা মাংস আর রাতে ভাত কিংবা রুটি আর তরকারির ব্যবস্থা করেছেন বড়বাবু।

পুলিশকর্মীরা জানান, গাড়ির ধাক্কায় এক বার লালুর কোমর ভেঙে গিয়েছিল। তখনও চিকিৎসক দেখিয়ে তাকে পরম যত্নে সুস্থ করে তুলেছিলেন স়ঞ্জীববাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবার ছেড়ে থানায় থাকি। কখন যেন দুই কুকুরছানাকে ভালবেসে ফেলেছি। লালু আমার খুব প্রিয়। এই থানা থেকে চলে যাওয়ার সময়ে ওকে নিয়ে যাব।’’

এ দিন তাই অস্ত্রোপচারের সময়েও লালুর পাশেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সঞ্জীববাবু। অস্ত্রোপচারের পরে ব্যান্ডেজ বাঁধা লালুকে থানার এক ঘরে শোয়ানো হয়। ইঞ্জেকশনের ঘোর কাটতেই বারবার ঘরের বাইরে বেরিয়ে পরছিল লালু। আর তা দেখে বড়বাবুর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘চোর-ডাকাতরা কথা শোনে, আর তুই শুনছিস না। তোর না শরীর খারাপ!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement