এ ভাবেই গাড়ি থামিয়ে চলে টাকা নেওয়া। মুম্বই রোডে। ছবি: সুব্রত জানা
দৃশ্য এক: ধূলাগড়ি টোলপ্লাজার সামনে বেআইনিভাবে ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে অন্য লেনে ঢুকে পড়ল একটি ট্রাক। সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশ কর্মী। তিনি এগিয়ে যেতেই হাতে একশো টাকার নোট গুঁজে দিলেন ট্রাক চালক।
দৃশ্য দুই: ভিভিআইপি আসবেন। তাই মুম্বই রোডে ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বীরশিবপুর এলাকায় কয়েকটি ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেল। ট্রাক চালকদের মিলিত দাবি, পুলিশকে টাকা দিয়েই ছাড় মিলেছে।
দৃশ্য তিনি: ঘটনাস্থল বাগনান লাইব্রেরি মোড়। রাত আটটা। মুম্বই রোডের উপরে তল্লাশির জন্য পরপর কয়েকটি গার্ডরেল বসানো হয়েছে। দেখা গেল, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশকর্মীদের টাকা দিলে তবেই ট্রাক ছাড়া হচ্ছে। ট্রাক চালকদের অভিযোগ, নিয়ম মানলেও টাকা দিতে হচ্ছে, না মানলে তো কোনও কথাই নেই।
কোথাও ট্রাকের নম্বর প্লেট নেই। কোথাও নিয়ম না মেনেই লেন বদল করছে গাড়ি। তবে পুলিশের বাড়ানো হাতে কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলেই আর কোনও সমস্যা নেই। হাওড়া জেলায় মুম্বই রোডের বিভিন্ন মোড় ঘুরে চোখে পড়েছে এমনই অনেক ছবি। যদিও পুলিশ কোনও অভিযোগই মানেনি।
হাওড়া জেলায় বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, সাঁকরাইল, ডোমজুড় এই পাঁচটি থানা এলাকার উপর দিয়ে মুম্বই রোড গিয়েছে। অভিযোগ, সব কটি থানা এলাকাতেই ট্রাক ও গাড়ি থামিয়ে বেআইনি ভাবে টাকা তুলছে পুলিশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামান্য অপরাধে অতিরিক্ত জরিমানা করা হচ্ছে। অভিযোগ, বাগনান লাইব্রেরি মোড়ে সপ্তাহ খানেক আগেও ট্রাক দাঁড় করিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি। দাবি মতো টাকা না দিলে হেনস্থাও করা হয়েছে। যদিও এখন সে সব বন্ধ। কারণ সম্প্রতি লাইব্রেরি মোড়ের সামনে খাদিনান মোড় এলাকায় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য রাত ন’টার পর থেকে ট্রাক থামিয়ে চালকদের চোখে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে জেলা পুলিশ। সেখানে বড় কর্তারাও থাকছেন। ট্রাক চালকদের অনুমান, তাঁদের চোখে পড়ে যাওয়ার ভয়েই আপাতত ওই এলাকায় টাকা তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে।
অভিযোগ, শুধু মুম্বই রোড নয়, রাস্তার ধারে ট্রাক দাঁড় করিয়ে কেউ ধাবায় খেতে ঢুকলে সেখানেও গিয়েও পুলিশ টাকা চায় বলে। শুধু ট্রাক নয়, অটো এবং ছোটগাড়ি থেকেও টাকা তোলা হয়। সম্প্রতি বাগনানের মানকুর মোড়ে অটো ও ছোটগাড়ি রাখার জন্য পুলিশ গাড়ি পিছু দৈনিক ২০০ টাকা দাবি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই টাকা দিয়ে দিলে লাইসেন্সহীন গাড়িও দিব্যি রাস্তায় চলছে।
রাস্তায় টাকা তোলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যত না অভিযোগ, ট্রাক চালকদের গাফিলতিও কিছু কম নয়। ওভারলোডিং, হাইস্পিড-সহ নানা ট্র্যাফিক আইনের তোয়াক্কা না করেই তাঁরা গাড়ি চালান। ধূলাগড় টোলপ্লাজার সামনে মুম্বই রোডের ধারে অনেকগুলি কারখানা রয়েছে। কোলাঘাটের দিক থেকে এসে কারখানায় যাওয়ার জন্য আন্ডারপাস রয়েছে। কিন্তু ট্রাক চালকেরা সেটি ব্যবহার করতে চান না। তাঁরা পুলিশকে টাকা দিয়ে লেন ভেঙে যাতায়াত করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলার পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘পুলিশের টাকা নেওয়ার কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে জমা পড়েনি।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য মুম্বই রোডে আরও বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। পুলিশ বা ট্রাক চালক কারও বেআইনি কাজই বরদাস্ত হবে না।