ভগ্নদশা: পেভার ব্লক ফাটিয়ে হেলে গিয়েছে গাছ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কলকাতাকে দেখেও শিক্ষা নিল না হাওড়া। সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে ফুটপাত বা পার্কের ভিতরে গাছের গুঁড়ির চারপাশ সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়ায় গাছের জীবন কতটা বিপন্ন হয়েছে তার প্রমাণ কলকাতা শহরে মিলেছে বার বার। এ বার সেই একই ভুলের মাসুল গুনতে হচ্ছে হাওড়াকেও।
প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করে হাওড়া ডুমুরজলা স্টেডিয়াম চত্বরের সৌন্দর্যায়ন করেছিল হাওড়া পুরসভা। ফুটপাত তৈরি করার সময়ে গোটা স্টেডিয়াম ঘিরে থাকা শ’পাঁচেক গাছের চারপাশে পেভার ব্লক দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। কংক্রিট করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি বড় বড় বট, অশ্বত্থ, পিপুলের চারপাশ। এর মধ্যে আমপানের মতো বিধ্বংসী ঝড় শহরের উপর দিয়ে গিয়েছে। ঝড়ের পরে দেখা যায় প্রায় শ’দুয়েক গাছ কংক্রিট, পেভার ব্লক ফাটিয়ে উপড়ে পড়েছে রাস্তায়। এর মধ্যে বহু গাছই ৮ থেকে ১০ ফুট চওড়া। অথচ যে গাছগুলি মাঠের ভিতরে মাটিতে জন্মেছিল সেগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে অনায়াসে।
কেন এমন হল?
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হল, সর্ম্পূণ অবৈজ্ঞানিক ভাবে গাছের গোড়ার চার দিকে কংক্রিট বা পেভার ব্লক বসিয়ে দেওয়ায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। ভূর্গভেও জল ঢুকতে পারছে না। গাছ চওড়ায় বড় হতে না পারলেও লম্বায় বড় হচ্ছে। যার ফলে সামান্য ঝড় হলেই নিজের শরীরের ভারসাম্য রাখা সম্ভব হচ্ছে না। গোড়ার মাটি আলগা হয়ে ভেঙে পড়ছে।
হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেনের যুগ্ম অধিকর্তা উদ্ভিদ বিজ্ঞানী কণাদ দাস বলেন, ‘‘গাছের গোড়া এ ভাবে কংক্রিট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার জন্যই এত গাছ পড়ে যাচ্ছে। কলকাতাতেও একই কারণে সামান্য ঝড় হলেই এত গাছ পড়ে যাচ্ছে।’’
আর এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বসন্ত সিংহ বলেন, ‘‘এই ভাবে গাছের বৃদ্ধিকে আমরা যদি কৃত্রিম উপায়ে আটকানোর চেষ্টা করি তাতে প্রচণ্ড ক্ষতি হয় গাছের। কংক্রিট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার জন্যই গাছের শিকড় ছড়াতে পারে না। ফলে গাছগুলি কমজোরি হয়ে পড়ে। সামান্য ঝড়েই পড়ে যায়। আমপানের মতো ঝড় হলে তো কথাই নেই।’’
ওই উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর মতে, বিদ্যুতের তারের উপরে গাছের ডাল যাতে না পড়ে তার জন্য শহরে যে ভাবে গাছের ডাল ছাঁটা হচ্ছে তাতেও গাছের ক্ষতি হয়। কারণ গাছ নিজের দেহের ভারসাম্য অনুযায়ী ডালপালা মেলে ধরে। অথচ যখন ডালপালা ছাঁটা হয় তখন সেই ভারসাম্য দেখা হয় না। ফলে গাছ নিজের ভারসাম্য হারায়। পরে সেই গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
স্টেডিয়াম চত্বরের এই হাল দেখে পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য স্টেডিয়ামের রিং রোডের চারদিকে ইতিমধ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। পুরসভার এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘গাছকে কংক্রিট দিয়ে ঘিরে ফেলার যে ভুল হয়েছে তা শুধরে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্টেডিয়ামের চার দিকে আলো ও গাছের গুঁড়ি কেটে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এখনও যে গাছগুলি ফুটপাতে রয়েছে সেগুলি কী ভাবে বাঁচানো যায় তা দেখা হচ্ছে।’’