গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে প্রধান ও অনুগামীরা ঘরছাড়া
Conflicts

গ্রামে ফিরতে কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনা

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, উপপ্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্যেরা বেশিরভাগ গরহাজির থাকলেও পঞ্চায়েত চালানো যায়। কিন্তু প্রধান না থাকলে পঞ্চায়েত চলে না। ফলে, বেশিরভাগ উন্নয়নমূলক কাজ করা যাচ্ছে না।

Advertisement

নুরুল আবসার

আমতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছ’মাসেও অচলাবস্থা কাটল না আমতার চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এখনও গ্রামছাড়া প্রধান-সহ তিন সদস্য। প্রধানের প্রায় ৪০০ অনুগামীও গ্রামছাড়া। ফিরতে না-পারলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কী ভাবে ভোট দেবেন, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে রয়েছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে তাঁরা ঘরে ফেরানোর আবেদন জানিয়েছেন। এমনকি, নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।

Advertisement

নিরাপত্তার অভাববোধ থেকেই তাঁরা ফিরতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান ফারুক মিদ্দা। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ নিরাপত্তার কোনও আশ্বাস দেয়নি। আমাকে বিডিও চিঠি লিখে গরহাজির থাকার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। আমি উত্তরে জানিয়েছি, ফিরতে চাই বলে। আমার বিরুদ্ধে থানায় কোনও অভিযোগও নেই। নিরাপত্তা দেওয়া হলেই ফিরব।’’ জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘যাঁরা ফিরতে পারছেন না, তাঁদের মধ্যে অনেকের নামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। তাঁরা জামিন নিয়ে ঘরে ফিরতেই পারেন। যাঁদের নামে পরোয়ানা নেই তাঁরা ফিরতেই পারেন। আমরা সব রকম নিরাপত্তা দেব।’’

চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ১১ জন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন। কিন্তু পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের পরেই শুরু হয়ে যায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রথম থেকেই ফারুকের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন গ্রামছাড়া হয়ে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন উপপ্রধান-সহ সাত পঞ্চায়েত সদস্য। বোর্ড গঠনের সময়ে ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তিনি প্রধান হতে পারেননি। শেখ মোশারফ নামে এক সদস্য প্রধান হন। ফারুক সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পরেই মোশারফ পদত্যাগ করেন। ফারুক প্রধান হন। উপপ্রধান এবং ফারুকের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর পঞ্চায়েত সদস্যেরা গ্রামছাড়া থাকায় ফারুক মাত্র দু’জন সদস্যকে নিয়েই পঞ্চায়েত চালাচ্ছিলেন।

Advertisement

মাসছয়েক আগে একটি খুনের মামলায় ফারুকের কয়েকজন অনুগামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁরা গ্রামছাড়া হন। তাতে ফারুক দূর্বল হয়ে পড়েন। সেই সুযোগে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন গ্রামে ঢুকে পড়লে ফারুক গ্রামছাড়া হয়ে যান। এর ফলে পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা দেখা যায়। ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, উপপ্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্যেরা বেশিরভাগ গরহাজির থাকলেও পঞ্চায়েত চালানো যায়। কিন্তু প্রধান না থাকলে পঞ্চায়েত চলে না। ফলে, বেশিরভাগ উন্নয়নমূলক কাজ করা যাচ্ছে না।

গ্রামছাড়া এক ফারুক অনুগামীর খেদ, ‘‘সংশোধিত ভোটার কার্ড এসে পঞ্চায়েতে পড়ে আছে। আনতে যেতে পারছি না। গ্রামে ঢুকলেই খুন করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে না। শেষবারের মতো আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফেরানোর আবেদন জানাব। কাজ না হলে সরাসরি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে চিঠি লিখব। গ্রামে ফিরতে না পারলে তো আমরা ভোট দিতে পারব না।’’

ফারুকের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রজব আলির দাবি, ‘‘ফারুককে কেউ হুমকি দেননি। তিনি নিজে এত অপকর্ম করেছেন যে গ্রামবাসীরা তাঁকে ঢুকতে দিতে নারাজ। তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে আমাদের কারও কোনও অভিযোগ নেই। তাঁরা গ্রামে আসতেই পারেন।’’

পুলিশ এবং উপপ্রধান আশ্বাস দিলেও ভরসা পাচ্ছেন না গ্রামছাড়ারা। ফারুকের দাবি, তাঁর অনুগামী অনেকেরই জামিন হয়ে গিয়েছে। বাকিদের প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে প্রধান বলেন, ‘‘যে গোষ্ঠীর লোকজন আমাদের তাড়িয়েছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

বাম আমলে এই পঞ্চায়েতে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছিল। সেইসময়ে তৎকালীন বিরোধী দলের বহু মানুষ ঘরছাড়া ছিলেন। তাঁরা ভোট দিতে পারতেন না বলে অভিযোগ। বিভিন্ন মহল থেকে সেই অভিযোগ পেয়ে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের পদস্থ প্রতিনিধিরা এই গ্রামে এসে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন। তাঁদের সুপারিশে আধা সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করানোর ব্যবস্থা হয়। তাই এ বার কমিশনের যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন ফারুকরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement