গতিহারা: জবরদখল, আবর্জনার জেরে দুই জেলার অনেক জায়গাতেই কার্যত পথ হারিয়েছে সরস্বতী নদী। উপগ্রহ মানচিত্রেও মিলছে না তার হদিস।
ভাগ্যিস একটি লোহার পাতের নড়বড়ে সেতু রয়েছে। না হলে কে বলবে নীচে সরস্বতী রয়েছে!
জল দেখাই যায় না। শুধু কচুরিপানা। জবরদখলকারীদের জন্য পাড় বলেও কিছু নেই। গড়ে উঠেছে বাড়ি-দোকান। তবু ওই নদীতেই কালীপুজোর বিসর্জন হয়েছে। এখনও পড়ে কাঠামো। ছবিটি ডোমজুড়ের বিপ্রন্নপাড়ার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময়ে এই এলাকায় সরস্বতীর জল ছিল কাচের মতো স্বচ্ছ। গঙ্গার সঙ্গে যোগ থাকায় নদীতে নিয়ম করে জোয়ার-ভাটা খেলত। গঙ্গা থেকে আসত তারুই মাছ, চিতি, কাঁকড়া। অনেকে আনন্দে মাছ ধরতেন। ডোমজুড়, ঝাঁপড়দহ প্রভৃতি এলাকার মুদিখানার দোকানগুলিতে নৌকায় করে জিনিসপত্র আসত। মূলত ১৯৭৮ সালের বন্যার পর বদলে যায় ছবি।
নিমেরহাটির বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর অসীম হাজরা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় সরস্বতীর দাপট আমি নিজের চোখে দেখেছি। তখন নদীর ধারে শুধু মাটির বাড়ি ছিল। ‘৭৮-এর বন্যায় মাটির বাড়িগুলি ভেঙে যায়। তারপর থেকে এখানে পাকাবাড়ি তৈরির হিড়িক ওঠে। সেই শুরু। ধীরে ধীরে নদীর দু’পাড় জবরদখল হয়ে যায়। নদীও সরু হয়ে পড়ে। এখন তো এটা নালা। ছোটবেলায় নদীতে আমি মাছ ধরেছি, স্নান করেছি। এখন পা ডোবানো যায় না। পানার জন্য বেড়েছে মশার উৎপাত।’’
সরস্বতীর এক দিকে ডোমজুড়ে বিপ্রন্নপাড়া। অন্য দিকে নিমেরহাটি। দু’ এলাকাটিতেই নদী রয়েছে নামেই। নিমেরাহাটির বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদীতে কারখানার দূষিত জল পড়ে। সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ায় বর্ষাকালে নদীর জল উপচে পড়ে এলাকা ভাসায়। সেই কারণে এই এলাকা ‘বন্যাপাড়া’ নামেও পরিচিত। অথচ, এই ডোমজুড়েরই দক্ষিণ ঝাঁপড়দহে সেচ দফতর সম্প্রতি সরস্বতী থেকে বর্জ্য তোলার ব্যবস্থা করেছে। ‘সরস্বতী বাঁচাও কমিটি’র তরফে বাপি ঠাকুর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এলাকাটি জনবহুল এবং রাস্তার ধারে হওয়ায় সেচ দফতর বর্জ্য সাফ করছে। বাকি এলাকায় তা হচ্ছে না।’’