লাইফ জ্যাকেটে অনীহা যাত্রীদের, অনেকের আবার ভয় রোগের চন্দননগরে সিদ্ধান্ত জরিমানার

চন্দননগরের রানিঘাট এবং গঙ্গার অপর পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল ঘাটের মধ্যে ফেরি পারাপার চলে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৫
Share:

অপচয়: লাইফ জ্যাকেট না পরেই চলছে ফেরি পারাপার রানিঘাটে। নিজস্ব চিত্র

নির্দেশ রয়েছে খাতায়-কলমে। কিন্তু এ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য দিতে পারছে না জেলা পরিবহণ দফতর। হুগলি শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ফেরিঘাট থেকে ‘লাইফ জ্যাকেট’ ছাড়াই লঞ্চ-ভুটভুটিতে গঙ্গা পেরোচ্ছেন যাত্রীরা। জ্যাকেটগুলি কোথাও পড়ে থাকছে ঘাটের পাশে, কোথাওবা লঞ্চেই। কেউ গায়ে তুলছেন না। সেই ঝুঁকির যাত্রায় ইতি টানতে এ বার যাত্রীদের জরিমানার সিদ্ধান্ত নিল চন্দননগর পুরসভা। শিল্পাঞ্চলের অন্য ঘাটগুলির ক্ষেত্রে একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে জেলা পরিবহণ দফতরও।

Advertisement

চন্দননগরের রানিঘাট এবং গঙ্গার অপর পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল ঘাটের মধ্যে ফেরি পারাপার চলে। কিছুদিন আগেই ইজারাদারের থেকে রানিঘাটের দায়িত্ব চন্দননগর পুরসভার হাতে চলে আসে। শুরু হয়েছে ভেসেল পরিষেবাও। শহরের গোন্দলপাড়া ঘাটটি অবশ্য ইজারাদারের হাতেই রয়েছে। পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘ঝুঁকির পারপার আর নয়। যাত্রী সুরক্ষা বিধি সকলকেই মানতে হবে।

সচেতনতার অভাবে যাত্রীরা সে ভাবে লাইফ জ্যাকেট পরেন না। কিন্তু না-পরলে এ বার জরিমানা করা হবে। দু’টি ঘাটে শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে চলেছে।’’ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস বলেন, ‘‘দফতরের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ঘাটে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, জ্যাকেট ছাড়া পারাপার নয়। তা হচ্ছে না। মানুষ সচেতন না হলে চন্দননগরের মতো অন্য ঘাটের ক্ষেত্রেও জরিমানার পথে হাঁটতে হবে। দুর্ঘটনা ঘাট বেছে হয় না।’’

Advertisement

গুদামঘরে ডাঁই করে রাখা জ্যাকেট। নিজস্ব চিত্র

২০১৭ সালের এপ্রিলে জোয়ারের ধাক্কায় ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ঘাটের জেটি ভেঙে ১৯ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তার পরেও কয়েকটি ঘাটে ভুটভুটি দুর্ঘটনা হয়েছিল। নড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্য পরিবহণ দফতর গঙ্গার সব অস্থায়ী জেটিঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেয়।

স্থায়ী জেটিঘাট দিয়ে গঙ্গা পারাপারের সময় যাত্রীদের ‘লাইফ জ্যাকেট’ পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। ঘাটগুলিতে মজুত করা হয় জ্যাকেট। নির্দেশ অমান্যকারী যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়। কিছুদিন নির্দেশ মেনেই পারাপার চলে।

কিন্তু তারপর?

রানিঘাট, গোন্দলপাড়া ঘাট, চুঁচুড়া ঘাট, ভদ্রেশ্বরের বাবুঘাট, শ্রীরামপুর খেয়াঘাট— সব জায়গাতেই ছবিটা একই। পারাপার চলছে। কিন্তু এই বর্ষার মরসুমেও ভরা গঙ্গায় যাত্রীদের গায়ে ‘লাইফ জ্যাকেট’ নেই। ঘাটকর্মীরা যাত্রীদেরই দুষছেন। তাঁদের দাবি, অনেকবার বলা হলেও যাত্রীরা ওই জ্যাকেট পরতে অনীহা প্রকাশ করেন। ব্যবহার না-হওয়ায় অনেক জ্যাকেট নষ্ট হতে বসেছে। রানিঘাটের কর্মী অসীম রুইদাস বলেন, ‘‘নিয়ম চালুর পরে কিছুদিন যাত্রী লাইফ জ্যাকেট পরেছিলেন। এখন অনুরোধেও কেউ নিতে চান না। কেউ কেউ নিয়েও লঞ্চে ফেলে রাখেন।’’

কী বলছেন যাত্রীরা? অনেকেই ওই জ্যাকেট রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজনের পরা জ্যাকেট অন্যজন নিতে আপত্তির কথাও স্পষ্ট জানিয়েছেন। চন্দননগরের সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত রানিঘাট হয়ে জগদ্দল যান। তাঁর কথায়, ‘‘কত মানুষ একই জ্যাকেট পরেছেন, ভাবা যায়? জ্যাকেটগুলি কি পরিষ্কার করা হয়? অপরিষ্কার জিনিস আমরা পরব কেন? রোগ হতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement