অসময়: বাড়ি ফিরে যাচ্ছে এক ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষিকারা গোঁ ধরে থাকায় শুক্রবারেও পড়াশোনা শিকেয় উঠল পান্ডুয়ার রাধারানি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্কুলে এসেও ক্লাস না করেই ফিরতে হল প্রায় এক হাজার ছাত্রীকে। রান্না না-হওয়ায় এ দিনও তাদের মিড-ডে মিল জুটল না। নতুন বইও পেল না তারা।
বেলা ১২টা নাগাদ স্কুল থেকে বেরনোর সময় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘মা সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রান্না হয়নি। এখন বাড়িতে ফিরে খাব কি?’’ অভিভাবকদের প্রশ্ন, শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে বচসায় জড়ালে ছাত্রীরা কী শিখবে? তাঁরা জানান, বহু গরিব পরিবারের মেয়ে এই স্কুলে পড়তে আসে। কারও বাবা চাষ বা দিনমজুরি করেন। কারও মা পরিচারিকা। স্কুলে মিড-ডে-মিল না পেয়ে তাঁদের মেয়েরা সমস্যায় পড়ছে।
শিক্ষিকাদের দু’পক্ষের কাজিয়ায় ওই স্কুলে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবকদের। তাঁদের অভিযোগ, অচলাবস্থা চললেও পরিচালন সমিতি কার্যত হাত গুটিয়ে রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই) লক্ষ্মীধর দাসের নির্দেশে এ দিন অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক (সদর) সৌরভ পাল স্কুলে এসে যুযুধান দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তাতেও অবশ্য সমস্যা মেটার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কেউ।
ডিআই জানান, সৌরভবাবুর রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার রান্না করে ছাত্রীদের মিড-ডে-মিল দিতে শিক্ষিকাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীরা কেন দু’দিন মিড-ডে-মিল পেল না, শিক্ষিকাদের কাছে তার জবাব চাওয়া হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (সদর) অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা দেখছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি সমস্যা শীঘ্রই মিটবে।’’
স্কুল সূত্রের খবর, এখানে প্রায় ১৯০০ ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষিকা ২৯ জন। দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী সরকারের সঙ্গে অধিকাংশ শিক্ষিকার বনিবনা নেই। বিভিন্ন বিষয়ে দু’পক্ষের গোলমালে প্রায়ই পড়াশোনা লাটে ওঠে বলে অভিযোগ। মাস তিনেক আগে কাবেরীদেবী অভিযোগ তোলেন, অন্য শিক্ষিকারা তাঁকে মারধর করেছেন। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগও করেন। তার পর থেকে তিনি স্কুলে আসেননি। তিন মাস পরে বৃহস্পতিবার, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন তিনি স্কুলে আসতেই অন্য শিক্ষিকারা বেঁকে বসেন। তিনি স্কুল থেকে না-বেরোলে তাঁরা ক্লাস করাবেন না, এই দাবিতে রাস্তায় এসে বসেন ওই শিক্ষিকারা। ছাত্রীরা ফিরে যায়।
শুক্রবার খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও হাজার খানেক ছাত্রী স্কুলে এসেছিল। প্রধান শিক্ষিকাও এসেছিলেন। কুড়ি জনের বেশি শিক্ষিকাও আসেন। কিন্তু ক্লাস করেননি। তবে এ দিন রাস্তায় নয়, গেটের ভিতরে তাঁরা বসে পড়েন। ক্লাস না হওয়ায় বেলা ১২টা নাগাদ প্রধান শিক্ষিকা মেয়েদের ছুটি দিয়ে দেন। জনা দশেক অভিভাবক স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করেন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা জানতে চান। তবে প্রধান শিক্ষিকা নিশ্চিত করে কিছুই জানাতে পারেননি বলে অভিভাবকরা জানান। বেলা আড়াইটে নাগাদ অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক (সদর) স্কুলে আসেন। ঘণ্টাখানেক পরে তিনি বেরিয়ে যান। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেননি।
কাবেরীদেবী বলেন, ‘‘কেউ ক্লাস না করানোয় মেয়েদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। মিড-ডে-মিলের দায়িত্বে অন্য শিক্ষিকা রয়েছেন। রান্না কেন হয়নি, বলতে পারব না। আমাকে কেউ কিছু জানাচ্ছেন না। হাজিরার খাতা পর্যন্ত খুঁজে পাইনি।’’ তিনি জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি স্থগিত রেখেছেন। কবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবেন, তিনি বুঝতে পারছেন না। অন্য শিক্ষিকারা সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি। বৃহস্পতিবার তাঁরা জানিয়েছিলেন, প্রধান শিক্ষিকা তাঁদের নানা ব্যাপারে হেনস্থা করেন। প্রাণে মারার হুমকি শুনতে হয়েছে। তাই তাঁর সঙ্গে তাঁরা এক প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান না।