সম্পত্তি না-দেওয়ায় বৃদ্ধা মাকে মার, হুমকি ছেলের

তাঁর সম্বল নিজের একতলা বাড়িটি এবং কিছু জমি। কিন্তু সেই সম্পত্তি লিখে না-দেওয়ায় দিনের পর দিন বৃদ্ধাকে মারধর এবং খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৬
Share:

অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন পূর্ণিমাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

মধ্য তিরিশের যুবকটি কোনও কাজ করেন না। বিয়ে করেছেন। দু’টি সন্তানও রয়েছে। সংসার চালাতে যুবকের বৃদ্ধা মা পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর সম্বল নিজের একতলা বাড়িটি এবং কিছু জমি। কিন্তু সেই সম্পত্তি লিখে না-দেওয়ায় দিনের পর দিন বৃদ্ধাকে মারধর এবং খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

শনিবার সকালে চন্দননগরের দশভূজাতলার বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব পূর্ণিমা ঘোষ নামে ওই বৃদ্ধা স্ট্র্যান্ডের বেঞ্চে বসে কাঁদছিলেন। কয়েকজন তা দেখে ফেলেন। কারণ জেনে তাঁরা থানায় নিয়ে গেলে বৃদ্ধা একমাত্র ছেলে তারকের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় আসায় ফের ছেলের হাতে মার খাওয়ার আশঙ্কায় আর বাড়ি না-ফিরে পরিচিতের কাছে গিয়ে থাকবেন বলেও জানান পূর্ণিমাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটার সংসারের দিকে লক্ষ্য নেই। আমি কোনও রকমে চালাচ্ছি। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ও নিয়ে নিতে চায়। আপত্তি জানানোতেই আমার উপরে অত্যাচার শুরু করে। পাড়া-পড়শি কারও কথা শোনে না।’’

অভিযোগের ভিত্তিতে সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে তারকের দাবি, ‘‘ব্যবসা করার জন্য দলিল চেয়েছিলাম। বাড়ি-জমি আমার নামে থাকলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে সুবিধা হতো। মায়ের উপরে কোনও অত্যাচার করিনি। মা-ই আমার সঙ্গে সহযোগিতা করছে না।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে পূর্ণিমাদেবীর স্বামী মারা যান। তারপর থেকেই এলাকায় পরিচারিকার কাজ করেন বৃদ্ধা। দিনের বেশিরভাগ সময় তারক একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়েই কাটায়। কয়েক মাস ধরে সে অত্যাচার চালাচ্ছে বলে বৃদ্ধার অভিযোগ। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, গালিগালাজ সব সময়ে লেগেই রয়েছে। মারধরের পাশাপাশি ছেলে তাঁর গলায় শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে বা খাবারে বিষ মিশিয়ে খুনেরও হুমকি দেয়। পড়শিরা কয়েকবার বুঝিয়েও তারককে ঠেকাতে পারেননি। তার আচরণের প্রতিবাদ জানানোয় তারক স্ত্রীকেও মারধর করেছে। কয়েকদিন ধরে ছেলের অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। সহ্য করতে না-পেরেই এ দিন তিনি স্ট্র্যান্ডে চলে আসেন।

পূর্ণিমাদেবীর পড়শি সমর মৌলিকও তারকের বিরুদ্ধে মাকে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এত বয়স হওয়া সত্বেও পূর্ণিমাদেবী সৎ পথে সংসার চালাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও তারক মায়ের উপর অত্যাচার করে চলেছে। আমরা সমস্যা সমাধানের অনেক চেষ্টা করেছিলাম। লাভ হয়নি। এ বার পুলিশ যদি কিছু করে।’’ এ দিন বৃদ্ধাকে যাঁরা স্ট্র্যান্ডে কাঁদতে দেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুনয়না চৌধুরী নামে এক মহিলাও। তিনি বলেন, ‘‘সকালবেলায় বৃদ্ধাকে কাঁদতে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। শুনলাম তাঁরা দুঃখের কথা। প্রশাসনের উচিত এইসব ছেলেদের উচিত শাস্তি দেওয়া। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটানোর সময় একটু চিন্তা করে তারা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement