পালকিতে চড়ে মহাদেব আসেন বিয়ে করতে

বৃহস্পতিবার নীল পুজোয় সকাল থেকে দম ফেলার ফুরসত ছিল না উলুবেড়িয়ার মাধবপুর গ্রামের বিভাস ভৌমিকের। এদিন রাতে তাঁর বাড়িতেই যে বিয়ের আসর।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

শ্বশুরবাড়ি: বিয়ে করতে চলেছে শিব।

বৃহস্পতিবার নীল পুজোয় সকাল থেকে দম ফেলার ফুরসত ছিল না উলুবেড়িয়ার মাধবপুর গ্রামের বিভাস ভৌমিকের। এদিন রাতে তাঁর বাড়িতেই যে বিয়ের আসর। যার তার বিয়ে নয়, এই বিয়ে স্বয়ং দুর্গার। পাত্র শিব। সঙ্গে শ’চারেক বরযাত্রী। তাঁদের মধ্যে দেড়শো সন্নাসী। তবে তবে এঁদের আহারাদির ব্যবস্থা করতে হয়নি বিভাসবাবুকে। কারণ রান্না করা খাবার তাঁদের খাওয়া মানা। তাই ব্যবস্থা হয়েছিল ফলমূলের।

Advertisement

কিন্তু বাকিরা? তাঁদের জন্য ছিল ভালই ব্যবস্থা। ফ্রায়েড রাইস, কাশ্মীরি আলুর দম, আমের চাটনি, স্যালাড। রীতিমত ভুরিভোজ। শিবের বিয়ে বলে কথা। রাত ১০টা নাগাদ সকলে মিলে পাত পেড়ে খেলেন সেইসব।

বর এসেছিলেন প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে। মাধবপুরেরই বাসিন্দা অপূর্ব কুণ্ডুর বাড়িতে ১৮ বছর ধরে শিব অধিষ্ঠিত। সন্নাসীদের কাঁধে পালকিতে চড়ে শিব আসেন বিয়ে করতে। বরযাত্রী দলের সঙ্গে ছিল ব্যান্ড পার্টি। মশাল— সব মিলিয়ে এলাহি ব্যাপার।

Advertisement

৩০ চৈত্র নীল রাত্রি। ওইদিন শিবমন্দিরের সামনে ঝাঁপ হয়। সারা রাত ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলার গ্রামে এ পরিচিত ছবি। এমনকী শিব-দুর্গার বিয়ে দেওয়ার রীতিও পালিত হয় সব জায়গায়। তারই শরিক হয়ে মাধবপুরও ওইদিন মেতে উঠেছিল শিব-দূর্গার বিয়েতে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয় রাত ১২টা নাগাদ। তারপরে সন্ন্যাসীরা পালকিতে চাপিয়ে সদ্য বিবাহিত দম্পতিকে নিয়ে আসেন গ্রামের শিবমন্দিরে। এখানে বসিয়ে রাখা হয় শিব-দূর্গাকে। তাঁদের সামনে চলে ঝাঁপ-সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরদিন ভোরে তাঁদের পালকিতে চাপিয়ে ফিরিয়ে আনা হয় অপূর্ব কুণ্ডুর বাড়িতে।

অপূর্ববাবুর পরিবারের লোকজন জানালেন, একটি আলাদা ঘর রাখা আছে শিব-দুর্গার সংসার পাতার জন্য। আগামী এক বছর এখানে তাঁরা থাকবেন। পরের বছর গাজনের সময়ে ফের দুর্গাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বিভাস ভৌমিকের বাড়িতে। সেখান থেকেই আবার দুর্গাকে বিয়ে করে আনবেন শিব।

গাজন কমিটির পক্ষে আনন্দ সিংহ এবং রাম পাল জানালেন, শিব এবং দূর্গা কার বাড়িতে থাকবেন তা গাজন কমিটি ঠিক করে। যদিও বিভাসবাবু এবং অপূর্ববাবু দুই পরিবারই জানিয়েছে আপাতত এই দায়িত্ব ছাড়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। প্রতি বছর শিব এবং দূর্গার নতুন মূর্তি তৈরি হয়। সাজানো হয় পালকি।

দামোদরের কোল ঘেঁযা মাধবপুর গ্রাম। নদীবাঁধ ধরে রাতে যখন বরযাত্রী দলের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রওনা দেয়, নদীর ঢেউয়ে তখন শব্দ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ। প্রকৃতিও যেন মেতে ওঠে এই বিয়ের উৎসবে!

শ্বশুরবাড়ি: বিয়ে করতে চলেছে শিব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement