সুস্বাগতম: নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সেজেছে হুগলি স্টেশন সংলগ্ন একটি পার্ক। — ছবি তাপস ঘোষ।
আসছে ২০২১। আজ, বৃহস্পতিবার বর্ষশেষ। হুল্লোড়ের আতিশয্যে যাতে বিপদ না ঘটে সে দিকে কড়া নজরের পাশাপাশি করোনা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে সতর্ক থাকবে দুই জেলার পুলিশ।
করোনা-সতর্কতায় এ বার বিভিন্ন উৎসবে কোপ পড়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, বর্ষশেষের উৎসবেও করোনা-বিধি নিয়ে শিথিলতা চলবে না। চন্দননগর কমিশনারেট এবং হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যে সব জায়গায় জমায়েত হবে, সেখানে প্রত্যেকে যাতে যথাযথ ভাবে মাস্ক ব্যবহার করেন এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকে, তা যথাসম্ভব নিশ্চিত করার চেষ্টা করে হবে। লকডাউনের সময় থেকে গড় মান্দারণ, রামমোহন রায় পর্যটন কেন্দ্র, নিউ দিঘা এবং সুয়াখাল— হুগলি জেলা পরিষদের এই চারটি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ। শুক্রবার নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এগুলি খুলে দেওয়া হবে। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুবীর বলেন, ‘‘প্রত্যেককে আবেদন করা হবে, পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে-ভিতরে সর্বত্রই যেন করোনা-বিধি মানা হয়।’’ বিভিন্ন পিকনিক স্পট, পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক, গঙ্গার ধারে কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, বিশেষ দিনে বিশেষত নয়া প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক ছোটানোর প্রবণতা থাকে। তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। সেই কারণে যান শাসনে বাড়তি নজর দেওয়া হবে। বেশি গতিতে বা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসস্ট্যান্ড, অটোস্ট্যান্ডে নজর রাখা হবে। ভ্যানে, মোটরবাইকে সাদা পোশাকের পুলিশ টহল দেবে। ইভটিজ়িংয়ের মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশও মোতায়েন করা হবে। বিভিন্ন মহল্লায়, ক্লাবেও পুলিশি টহল চলবে। ডিজে বাজার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চন্দননগর কমিশনারেটের আধিকারিকরা জানান, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং দিল্লি রোডের ধারের বিভিন্ন পানশালার আশপাশে পুলিশ থাকবে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে তারা ব্যবস্থা নেবে। সিপি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। বেচাল দেখলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশনারেটের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকরা রাস্তায় থাকবেন। আমি নিজেও থাকব।’’ গ্রামীণ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ সবাই যাতে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হবে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামলাতে গেলে অনেক সময় পুলিশের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে উল্টো দোষারোপ করা হয়। সে জন্য পুলিশকর্মীদের পোশাকে বডি ক্যামেরা লাগানো থাকবে। ফলে, কেউ অভব্য আচরণ করলে সহজেই প্রমাণিত হবে।’’ গঙ্গায় টহলদারি চলবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ পিকনিক স্পটে নজরদারি চালাবে। শ্যামপুরের গাদিয়াড়া, গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রে নৌকাবিহার বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে বেশি জমায়েত, মদ্যপান করা যাবে না পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে। যে সব বাগানবাড়িতে চড়ুইভাতি হয়, তার মালিকদের বলা হয়েছে, ভিড় যেন না হয়। সন্ধ্যার আগেই যেন বাগানবাড়ি ফাঁকা করে দেওয়া হয়— সে দিকে নজর রাখতে। সবাই যাতে মাস্ক পরে থাকেন, সে বিষয়ে সচেতন করতে কোথাও কোথাও পুলিশের তরফে বুধবার বিকেলে মাইকে প্রচার করা হয়।
গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, কোভিড-বিধি মেনে সবাই যাতে আনন্দ করেন, সেটা সুনিশ্চিত করা হবে।