ক্ষতিপূরণে সম্মতি এনএইচএআই-এর

শেষ পর্যন্ত উলুবেড়িয়ার খলিসানির কালীতলায় মুম্বই রোডের অসমাপ্ত ‘আন্ডারপাস’ তৈরিতে জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৫
Share:

অসম্পূর্ণ আন্ডারপাস। —নিজস্ব চিত্র।

জট মাত্র ৪২ শতক জমি নিয়ে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে টানাপড়েন চলছে প্রায় চার বছর। মামলা গড়িয়েছে আদালতে। শেষ পর্যন্ত উলুবেড়িয়ার খলিসানির কালীতলায় মুম্বই রোডের অসমাপ্ত ‘আন্ডারপাস’ তৈরিতে জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)।

Advertisement

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতা প্রকল্প রূপায়ণ বিভাগের অধিকর্তা সুব্রত নাগ বলেন, ‘‘আমরা ওই প্রকল্পের জন্য জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শীঘ্রই জমি-মালিকদের এবং কলকাতা হাইকোর্টকে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। তারপরেই অসমাপ্ত কাজ শুরু করা হবে।’’ ক্ষতিপূরণ পেলে তাঁরা মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানিয়েছেন জমি-মালিকেরা। তাঁদের পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে যিনি মামলা করেছেন, সেই কিশোরীমোহন ধাড়া বলেন, ‘‘আমরা এখনও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও খবর পাইনি। ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা প্রত্যাহার করব। কিন্তু না-পেলে দাবি থেকে আমরা সরব না।’’

প্রায় চার বছর আগে ওই এলাকার মুম্বই রোডের দু’দিকের জনপদের বাসিন্দাদের সুবিধার্থে ‘আন্ডারপাস’ তৈরির কাজে হাত দেয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, মুম্বই রোডকে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো উঁচু করে তৈরি করার কাজ (ওই সংস্থার পরিভাষায় ‘আন্ডারপাস’)। নীচের রাস্তা দিয়ে ছোট গাড়ি এবং সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন। এ জন্য মুম্বই রোডে দু’টি থামও তৈরি হয়। ওই সংস্থা নিয়মমতো সেই সময় মূল রাস্তা বন্ধ করে সাময়িক ভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য দু’দিকে সার্ভিস রোড তৈরির পরিকল্পনা হয়। সমস্যা দেখা দেয় কলকাতাগামী ‘লেন’-এর দিকে। এখানে সার্ভিস রোড তৈরির কাজ কিছুটা এগোনোর পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তা বন্ধ করে দেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের জমির জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ না-দিয়েই সার্ভিস রোড তৈরির পরিকল্পনা করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। মোট ৪২ শতক ওই জমির ‘রেকর্ড’ তাঁদের নামেই আছে বলেও দাবি করেন তাঁরা।

Advertisement

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সেই সময় পাল্টা দাবি করে, ওই জমি সরকার আগেই অধিগ্রহণ করেছে। জমি-মালিকেরা ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন। হয়তো ‘রেকর্ড’ পরিবর্তন হয়নি। এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রও আছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু ওই বাসিন্দারা অনড় থাকেন। ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট বিষয়টির মীমাংসা না-হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। তার পর থেকেই প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। প্রায় এক কিলোমিটার ওই ‘আন্ডারপাস’-এর জন্য মুম্বই রোডের খড়্গপুরের দিকের ‘লেন’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার দিকের অসম্পূর্ণ সার্ভিস রোড দিয়েই কোনও মতে দু’দিকের গাড়ি যাচ্ছে। ফলে, যানজট হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটছে। লোকজন রাস্তা পেরোতেও সমস্যায় পড়ছেন। এলাকাবাসীর দাবিমতো যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প হয়েছে।

কিন্তু চার বছর আগে ক্ষতিপূরণ না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে এ বার কেন সরছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ?

ওই সংস্থার পক্ষে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে জানতাম, জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সংশ্লিষ্ট দফতর জানায়, এ বিষয়ে কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরে কী আর করা যাবে!’’

দেরিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত বদলালেও তা ‘উদাসীনতা’ বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে তাপস কোদালি বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। অথচ, মুম্বই রোডের ধার থেকে অন্তত ১০০ জন দোকানদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কাজ তো হলই না। উল্টে এই মানুষগুলির তিন বছরের উপার্জন নষ্ট হল। পর পর দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হল। ক্ষতিপূরণ যদি দেওয়াই হবে, তবে এত দেরি করা হল কেন?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement