নিহত মুন্না বড়বাজারের। ছবি: তাপস ঘোষ।
খানিক দূরে পুলিশ কমিশনারেটের সদর দফতর, জেলাশাসকের অফিস। ঢিলছোড়া দূরত্বে থানা, রাজ্যের মন্ত্রীর বাড়ি। শনিবার রাতে এমন ‘ভিআইপি’ এলাকাই গুলির শব্দে কেঁপে উঠল। রক্ত ঝরল। খুন হল এক দুষ্কৃতী।
ঘটনাস্থল হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার বড়বাজার। নিহতের নাম প্রবীর হেলা ওরফে হাতকাটা মুন্না (৩৯)। বাড়ি শহরের পিরতলায়। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, হাতকাটা মুন্না শনিবার সন্ধ্যায় নৈহাটিতে বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণে গিয়েছিল। ফেরার সময় রাত ১১টা নাগাদ কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে সে চুঁচুড়ার বড়বাজারে একটি ক্লাবে যায়। ক্লাবের টিভিতে ভারত-আফগানিস্তান বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচ চলছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা ক্লাবের কর্মকর্তা বিজয় কাহার বাইরে চেয়ারে বসে গল্প করছিলেন। মুন্নার সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটিও হয়। অভিযোগ, এর মধ্যেই মোটরবাইকে চেপে দুই দুষ্কৃতী এসে শূন্যে গুলি ছোড়ে। গুলির আওয়াজে সকলে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। তখনই মুন্নাকে খুব কাছ থেকে দু’টি গুলি করে ওই দুষ্কৃতীরা। মুন্নার বুকের বাঁ দিকে এবং তলপেটে গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় সে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। দুষ্কৃতীরা ফের শূন্যে গুলি ছুড়ে মোটরবাইকে চেপে পালায়।
চুঁচুড়া থানার আইসি নিরুপম ঘোষ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় কিছু মানুষ ওই রাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের পর থেকে দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে চেপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নিহতের স্ত্রী রিয়া অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবের সামনে রক্ত। বন্দুকের দু’টি গুলির খোল পড়ে রয়েছে। পুলিশ সে দু’টি উদ্ধার করে।
কী নিয়ে বিজয়ের সঙ্গে মুন্নার বচসা হয়?
বিজয়ের দাবি, ‘‘মুন্না আমাদের কাছে আশ্রয় চাইতে এসেছিল। রাজি হইনি। তাতেই ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তর্কাতর্কি শুরু করে দেয়। তার পরেই মোটরবাইকে দুষ্কৃতী এসে গুলি চালায়।’’
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা জানান, মুন্নার বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি-সহ দুষ্কতীমূলক নানা অভিযোগ রয়েছে। বছর এগারো আগে ভদ্রেশ্বরে জোড়া খুনের ঘটনায় সে মূল অভিযুক্ত। গ্রেফতারও হয়েছিল। সূত্রের খবর, বাম আমলে মুন্না এক তাবড় সাংসদের ছত্রছায়ায় ছিল। বোমায় বাঁ হাতের কব্জি উড়ে যাওয়ায় তার নাম হয় হাতকাটা মুন্না। তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর সে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গা-ঢাকা দিয়েছিল। বছর তিনেক আগে ফিরে এলেও রাস্তাঘাটে তাকে বিশেষ দেখা যেত না। রিয়ার দাবি, ‘‘ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছিল। চুঁচুড়ার কামারপাড়ায় আমার বাপের বাড়িতে থাকত। কিন্তু পুরনো শত্রুতার কারণেই ওকে মরতে হল।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।