নরক: উলুবেড়িয়া আদালতের পিছনে।
এ শহরে পদে পদে আবর্জনা!
ঝাঁ চকচকে রবীন্দ্রভবন আছে। তার সামনে বেমানান দু’টি ভ্যাটও রয়েছে। বেশিরভাগ দিনই দেখা যায়, সেখান থেকে উপচে পড়ছে বর্জ্য। দুর্গন্ধে টেকা দায়।
উলুবেড়িয়া আদালত চত্বর শহরের অন্যতম ব্যস্ত জায়গা। তার পিছন দিক যেন নরক! মেদিনীপুর খালের ধারে স্তূপ হয়ে থাকে খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে চায়ের প্লাস্টিক-কাপ, প্লাস্টিকের ব্যাগ-সহ কত কিছু! অনেকের কাছে সেটাই আবার শৌচাগার! ফলে, দুর্গন্ধ এখানেও। সামনেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বিচারকদের গাড়ি।
উলুবেড়িয়া কলেজের সামনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পিছন দিকের ছবিটাও একই। এমন উদাহরণ রয়েছে আরও অনেক। আর এ নিয়ে শহরবাসীর ক্ষোভেরও অন্ত নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে দেশের অন্যতম দূষিত শহরের তকমা পেয়েছে উলুবেড়িয়া। তার পরেও পুরসভা আবর্জনা সাফাইয়ে কেন সক্রিয় হচ্ছে না— এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
হাসপাতাল চত্বরেও আবর্জনার স্তূপ।
পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, প্রতিদিন সকালে সাফাই-বন্ধুরা রাস্তা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করেন। বর্জ্য গাড়িতে তুলে ডোমপাড়ায় পুরসভার নিজস্ব ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে আসা হয়। একই সঙ্গে অবশ্য শহরে কিছু ছোট ভ্যাটের কারণে বর্জ্যের সমস্যার কথা তাঁরা মেনে নিয়েছেন। পুরপ্রধান অর্জুন সরকার বলেন, ‘‘ছোট ভ্যাটে সব জঞ্জাল ধরে না। তাই বড় ভ্যাটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতদিন নানা প্রকল্পের কাজের জন্য শহরের স্বচ্ছতাতে পুরোপুরি নজর দেওয়া যায়নি। এ বার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সমস্যা যাতে মেটে, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে অভিযানের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করাও শুরু হয়েছে।’’ একই দাবি উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়েরও।
পুরপ্রধান ওই দাবি করলেও সাধারণ নাগরিকরা পুরসভার সক্রিয়তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রভবন এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুরকর্মীরা মাঝেমধ্যে এসে ভ্যাটের বর্জ্য সাফ করেন। বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা নিয়মিত ওই কাজ করেন না। তা করলে এলাকাটি তো পরিষ্কার থাকত! উলুবেড়িয়া আদালতের আইনজীবীরাও বলছেন, বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার হলে আদালতের পিছনের ওই দশা হয় না।
ওটি রোডের ভক্তার মোড় হয়ে মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে নাকে রুমাল চাপা দিতে হয় রোগীর আত্মীয়দের। সৌজন্যে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বর্জ্য। স্টেশন রোডের ধারেই শহরের একটি নামী নার্সিংহোমে ঢুকতে গেলে গা গুলিয়ে ওঠে। কারণ, এর সামনেই বসে মাছের বাজার। এই মাছ-বাজারের বর্জ্যও নিয়মিত সাফ করা হয় না বলে অভিযোগ। ফলে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। শহরের বুক চিরে দু’টি প্রধান রাস্তার একটি স্টেশন রোড, অন্যটি ওটি রোড। দু’টি রাস্তার ধারেই গড়ে উঠেছে অজস্র দোকান। সেই সব দোকানের আবর্জনা রাস্তা ও ফুটপাথ জুড়ে থাকে। কোথায় ভ্যাট, কোথায় সাফাই?
ছবিটার বদল চাইছেন শহরবাসী।
ছবি: সুব্রত জানা