বেল্টিং বাজারের কাছে জিটি রোডে এখানেই দুর্ঘটনা ঘটে। —নিজস্ব চিত্র।
কোথাও বালি চলে এসেছে জিটি রোডের ধার বরাবর। কোথাও স্তূপাকার পাথরকুচি ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় মাঝ রাস্তায়!
হড়কাচ্ছে মোটরবাইক, স্কুটার, সাইকেল। জখম হচ্ছেন আরোহী। অথচ, পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ শ্রীরামপুরেরর নানা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
মাস কয়েক আগে শ্রীরামপুরের রাজা কে এল গোস্বামী স্ট্রিটে রাস্তায় পড়ে থাকা বালিতে পিছলে গিয়ে জখম হন এক মোটরবাইক আরোহী। রাস্তার উপর ইমারতির জিনিস রাখা নিয়ে হইচই হয়। কিন্তু অবস্থা পাল্টায়নি। আর তাই দুর্ঘটনারও বিরাম নেই। বৃহস্পতিবার সকালে জিটি রোডে গাড়ির ধাক্কায় জখম হন এক পথচারী। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই ব্যক্তি বেল্টিং বাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমের কাছে জিটি রোডের উপরেই বালি ফেলে রাখা ছিল। বালি এড়াতে রাস্তার দিকে সরে আসতেই একটি গাড়ি পিছন থেকে তাঁকে ধাক্কা মারে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধাক্কা মেরেই গতি বাড়িয়ে গাড়িটি পালাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে থাকা প্রাক্তন কাউন্সিলর পিন্টু নাগ পুলিশকে জানালে পিয়ারাপুর ফাঁড়ির পুলিশ গাড়িটি আটক করে। জখম ব্যক্তিকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। রাস্তায় ইমারতির জিনিস ফেলে রাখায় পথচারীদের বার বার দুর্ঘটনায় পড়া নিয়ে এ দিন সরব হন বাসিন্দারা।
বস্তুত ঘটনা হল, পশ্চিম শ্রীরামপুর বা মাহেশের জিটি রোড, মল্লিকপাড়া, রাজা কে এল গোস্বামী স্ট্রিট, জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী রোড-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণ সামগ্রী রাখার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বটতলা এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালেই এলাকার স্কুলের সামনে লরি দাঁড় করিয়ে রাস্তার ধারে পাথর খালি করা হচ্ছিল। এমনিতেই স্কুলে ঢোকার সময় প্রচণ্ড যানজট হয়। তার উপরে লরি দাঁড় করিয়ে পাথর ফেলায় সমস্যা আরও বাড়ে। দিনের পর দিন এ সব চলতে থাকলেও পুরপ্রশাসন উদাসীন। বাসিন্দাদের অসুবিধা হলেও স্থানীয় কাউন্সিলাররা কোনও গা করেন না।
পুলিশের বক্তব্য, যানজট ও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলির একটি রাস্তার ধারে ফেলে রাখা বালি, খোয়ার স্তূপ। এতে রাস্তার প্রায় অর্ধেকই দখল হয়ে যানজট হচ্ছে। গাড়ির চাকায় বালি, খোয়া ছড়িয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাদের দাবি, এ সব বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে। শহরবাসীর ক্ষোভ, শহরের অলি-গলিতে অনেক বহুতল তৈরি হচ্ছে। নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় রাস্তা দখল করে ইমারতির জিনিস ফেলে রাখাটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে। যারা এ সব করছে, তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।
শ্রীরামপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস। মাস দেড়েক আগে তাঁর বাড়ির সামনে রাস্তায় ফেলে রাখা বালিতে হড়কে এক বাইক আরোহী জখম হন। সে কথা জানিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘রাস্তাঘাটে এমন ভাবে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখাটা উদ্বেগের বিষয়। পুরসভা প্রয়োজনে এ সব বন্ধ করতে জরিমানার ব্যবস্থা করতে পারে।’’ ওই ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর নিতাই গুহ জানান, এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছেন।
শুধু রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখাই নয়, যখন-তখন ট্রাক দাঁড় করিয়ে ইট, বালি ফেলা হয় বলেও অভিযোগ। জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, প্রশাসনের তরফে কোনও নির্দেশিকা পেলে তাঁদের সুবিধা হয়। বড় ট্রাকে ইমারতি দ্রব্য ফেলতে হলে রাত থেকে ভোরের মধ্যে ফেলতে হবে এবং সকালের আগেই রাস্তা থেকে তা তুলে ফেলতে হবে এমন ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়।’’ তাঁর দাবি, মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। তবে তাতে বিশেষ ফল হয় না।
কি বলছেন পুর কর্তৃপক্ষ?
পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (পূর্ত) উত্তম রায় বলেন, ‘‘পুরসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই এটা কার্যত ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর আগেও পুরসভার তরফে রাস্তাঘাটে ইমারতি দ্রব্য ফেলা বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি। তবে যে ভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে এ সব বন্ধ করতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করা হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া হবে।’’ পাশাপাশি দিনের বেলায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় বড় ট্রাকে ইমারতি দ্রব্য ফেলা বন্ধ করার চেষ্টা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।