কোথাও অপহরণের অভিযোগ, কোথাও ভাঙচুর-মারধর

মনোনয়নের শেষ দিন প্রার্থীদের উপরে হামলা নানা জায়গায়

বুধবার ছিল পুরভোটে মনোনয়ন জমার শেষ দিন। আগের রাত থেকেই হুগলির বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম প্রার্থীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মহিলা প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুর, দলের পার্টি অফিসে হামলার যেমন অভিযোগ উঠল, তেমনই মনোনয়ন জমা দিতে আসার পথে রাস্তা থেকে অপহৃত হলেন এক প্রার্থী। আর এক জন মনোনয়ন জমা দিয়ে মহকুমা শাসকের অফিস থেকে বের হতেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফর্মে সই করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

হুগলি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

পড়ে আছে জানলার ভাঙা কাচ, ভাঙা টব। বাঁশবেড়িয়ায়।—নিজস্ব চিত্র।

বুধবার ছিল পুরভোটে মনোনয়ন জমার শেষ দিন। আগের রাত থেকেই হুগলির বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম প্রার্থীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

মহিলা প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুর, দলের পার্টি অফিসে হামলার যেমন অভিযোগ উঠল, তেমনই মনোনয়ন জমা দিতে আসার পথে রাস্তা থেকে অপহৃত হলেন এক প্রার্থী। আর এক জন মনোনয়ন জমা দিয়ে মহকুমা শাসকের অফিস থেকে বের হতেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফর্মে সই করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। প্রথম ঘটনাটি বাঁশবেড়িয়ার, দ্বিতীয়টি শ্রীরামপুর ও পরের দু’টি আরামবাগ পুর এলাকার। হুগলিতে প্রার্থীদের উপরে হামলার এই চারটি ঘটনাকে কেন্দ্রে করে উত্তেজনা ছাড়ায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ এবং সিপিএম সূত্রে খবর, বুধবার দুপুরে, ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাঁদের প্রার্থী মমতা দপ্তরী এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জব্বার আলি পৃথকভাবে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন। মমতাদেবীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী রঘুনাথ দপ্তরী। আরামবাগ সিপিএমের জোনাল সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, জব্বার আলি মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়ে বের হতেই বের হতেই তৃণমূলের জনা পনেরো ছেলে চ্যাংদোলা করে তাঁকে তুলে অন্যত্র নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার ফর্মে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। দলের তরফে বিষয়টি থানায় জানানো হয়। পাশাপাশি মহকুমাশাসককেও লিখিতভাবে জানানো হয়। এ দিনই দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সিপিএমের জোনাল অফিস থেকে বেরিয়ে মমতাদেবী স্বামীকে নিয়ে মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। মিনিট সাতেকের দূরত্ব হলেও দেড়টা পর্যন্ত তাঁরা মহকুমাশাসকের অফিসে না পৌঁছনোয় দলের লোকজন খোঁজ শুরু করে। অভিযোগ, তখনই জানা যায় তৃণমূলের কয়েকজন তাঁদের রাস্তা থেকেই তুলে নিয়ে গিয়ে গোপন জায়গায় আটকে রেখেছে। এমনকী মমতার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। মনোনয়ন জমার সময়সীমা পার হওয়ার পরে সন্ধ্যা নাগাদ অবশ্য পুলিশ তাঁদের খবর পায়। পুলিশ জানায়, মমতাদেবী ও তাঁর স্বামী নিরাপদে তাঁদের আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। তাঁরা কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। তাঁরা ফোন বন্ধ রাখার জন্যই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। যদিও তৃণমূলের লোকজনই তাঁদের প্রাথীকে মারধর ও অপহরণ করে বলে সিপিএমের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। আরামবাগে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার বক্তব্য, “সিপিএম প্রার্থী দিতে পারছে না। তাই আমাদের ঘাড়ে মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে।”

Advertisement

অন্যদিকে, সোমবার রাতে বাঁশবেড়িয়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী ইন্দ্রনীস বিশ্বাসের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফের ওই পুরসভারই ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শিবানি দাশগুপ্তের বাড়িতে যথেচ্ছ ভাঙচুর করা হল। এ বারও অভিযুক্ত তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবানি দেবী ত্রিবেণীর পলাশপুরে থাকেন। মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ মোটরবাইকে চেপে জনা তিরিশ যুবক সেখানে চড়াও হয়। অভিযোগ, মিটার বক্স ভেঙে বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তারা। তার পরে শাবল দিয়ে ঘরের দরজা, জানলার পাল্লা ভেঙে দেয়। কেবল লাইনের তার ছিঁড়ে ফেলে। ফুলের টব ভাঙে। টালি ভাঙে। গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢোকারও চেষ্টা করে। শিবানিদেবীর বাড়ির লোকজন ভয়ে টু’শব্দ করেননি। তাঁর বৃদ্ধা মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই অবশ্য হামলাকারীরা চম্পট দেয়। শিবানীদেবী মগরা থানায় অভিযোগ দায়ের করায় তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।

শিবানিদেবী বলেন, “আমি যাতে মনোনয়ন তুলে নিই, সে জন্যই হামলা চালানো হল। হামলাকারীরা ঘরে ঢুকতে পারলে হয়তো মেরেই ফেলত আমাদের। ওরা বলছিল, আমাদের শেষ করে দেবে, সিপিএমকে-ও নিশ্চিহ্ন করে দেবে।” সিপিএমের বাঁশবেড়িয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমবার আমাদের এক প্রার্থীর বাড়িতে ওরা হামলা করেছিল। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের একই ঘটনা। নির্বাচন কমিশনের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানাব।” বাঁশবেড়িয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি রাজা চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের দলের কেউ ওই ঘটনায় যুক্ত নয়। ওদের গোষ্ঠী কোন্দলেই ওই ঘটনা ঘটেছে।’’ জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতেই শ্রীরামপুরের তারাপুকুরে তৃণমূলের লোকেরা সিপিএমের একটি কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ার-টেবিল উল্টে দেয় বলে অভিযোগ। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী প্রবীর চক্রবর্তীর অভিযোগ, “ওরা পার্টি অফিসে ঢুকে সব লন্ডভন্ড করে। আমাদের দু’জন কর্মীকে মারধর করে। ওরা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।” ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে এলাকায় মিছিল করে সিপিএম। তৃণমূল নেতা তথা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী উত্তম রায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের কেউ ওদের পার্টি অফিসে যায়নি। কাউকে কিছু বলাও হয়নি। ভোটারদের সহানুভূতি কুড়োতে নিজেরাই চেয়ার-টেবিল উল্টে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে। সিপিএম-ই যে এখানে সন্ত্রাস করে, সবাই জানে।”

তবে মনোনয়ন জমার শেষ দিনেও তৃণমূলের দলীয় কোন্দলের ছবি ফের দেখা গেল আরামবাগে। মঙ্গলবার সবক’টি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা পড়ে গেলেও বুধবার ১৯ নম্বর ওয়াডে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিলেন তৃণমূলের রিক্তা সিংহরায়। ওই তৃণমূল তাদের প্রার্থী করেছে পরিণীতা ঘোষকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement