শাসকদলের নেতাদের ছাতার নীচেই । একের পর এক দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায় আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ চুঁচুড়াবাসীর এমনটাই অভিযোগ। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি তাঁরা দুষছেন শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলকেও। তাঁদের অভিযোগ, কোন গোষ্ঠীর দাপট বেশি তা দেখাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা নানা দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। তোলাবাজিতে টান পড়লেই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। জড়িয়ে পড়ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। পুলিশও তাদের বাগে আনতে পারছে না। চুঁচুড়ায় ধারাবাহিক দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের নেপথ্যে এটাই আসল ঘটনা বলে দাবি বিরোধীদেরও।
সিপিএমেরই এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘সদর চুঁচুড়ায় রাজ্যের এক মন্ত্রী রয়েছেন। সেখানকার বিধায়ক শাসকদলের পোড় খাওয়া নেতা। ভাবা যায়! সন্ধ্যার পর মানুষ দুরু দুরু বুকে বাইরে বের হচ্ছেন। দিনে দুপুরে খুনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বসে বসে দেখছে।’’ চুঁচুড়ার এক ফরওর্য়াড ব্লক নেতার কথায়, ‘‘কিছুদিন আগে হীরা নামে এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ থানায় ডেকে ধমক দিচ্ছিল। সে কথা শাসকদলের এক নেতার কানে যায়। পুলিশকে সে জন্য কম হেনস্থা পোহাতে হয়নি।’’
বিরোধীদের এই চাপান-উতোরের মাঝেই অবশ্য জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘ওই খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই গ্রেফতার হবে।’’
পুলিশ কর্তারা আশ্বস্ত করলেও, গোলা বারুদের গন্ধে অতিষ্ঠ জেলা সদরবাসী। একের পর এক খুনের ঘটনায় পুলিশের উপর আস্থা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে মানুষের। রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতের অভিযোগও উঠছে। দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তে আতঙ্কিত শহরবাসী থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। গত কয়েক মাসে জেলা সদরে প্রায় ২০ জন খুন হয়েছেন। কখনও প্রকাশ্যে রাস্তায়। কখনও ভরা বাজারে। যদিও জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘অধিকাংশ খুনের ঘটনায় নিজেদের পুরনো শত্রুতার জেরেই দুষ্কৃতীরা মারা যাচ্ছে।’’
কিন্তু এত অস্ত্র আসছে কোথা থেকে?
সেই প্রশ্নে অবশ্য পুলিশের মুখে কুলুপ। কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের এই বাড়বাড়ন্তে সাধারণ মানুষ তো বটেই, স্কুল কলেজের পড়ুয়ারাও সন্ধ্যার পর গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেতে ভয় পাচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে গুলি বন্দুক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ালেও সে সব অস্ত্রের জোগানের খোঁজ কেন পাচ্ছে না পুলিশ?’’ কয়েকদিন আগেই চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর এলাকায় একদল দুষ্কৃতীর তাণ্ডবে মৃত্যু হয়েছিল এক ইমারতি ব্যবসায়ীর। গুরুতর জখম হয়েছিলেন বাজার করতে আসা এক যুবক। ওই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার রাতে হুগলির কানাগড় শরৎপল্লিতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে গুলি করে খুন করে এক যুবককে। ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। অথচ দুষ্কৃতীরা এখনও অধরা।
বিরোধীরা তোপ দাগলেও মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সবকিছুর পিছনে রাজনীতি খোঁজা অর্থহীন। চুঁচুড়ায় সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরেছে। বাকিদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে।’’