অবরোধ: খলিসানির ৬ নং জাতীয় সড়কে। ছবি: সুব্রত জানা
পুজো মণ্ডপের কাপড়ের রং কী হবে তা নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে জড়িয়ে গেল কলকাতা পুলিশের এক কর্মীর নাম।
শুক্রবার রাতে ওই ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে উলুবেড়িয়ার শ্যামসুন্দরচক গ্রাম। দু’টি দলই নির্বাচনের জন্য টাঙানো পরস্পরের ব্যানার, ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেয়। তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে সঞ্জীব দেঁড়ে নামে কলকাতা পুলিশের ওই কর্মী তরোয়াল এনে আস্ফালন করতে থাকেন এবং সেই অস্ত্রের কোপে দুই বিজেপি কর্মী জখম হন বলে অভিযোগ। সঞ্জীবের স্ত্রী স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী। খলিসানি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। সঞ্জীবও তৃণমূল মনোভাবাপন্ন এবং ওই দলের লোকজনের সঙ্গেই তাঁর ওঠাবসা বলে এলাকাবাসীর দাবি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঞ্জীব মানেননি। তিনি আবার বাড়িতে পাল্টা হামলা এবং তাঁর বৃদ্ধা মাকে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে।
প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলা ওই গোলমাল পুলিশ গিয়ে থামায়। হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার সকালে খলিসানিতে প্রায় এক ঘণ্টা ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন শ’খানেক বিজেপি কর্মী-সমর্থক। বিজেপির পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়ার পরে অবরোধ ওঠে। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জেলা (গ্রামীণ) বিজেপি সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘সঞ্জীব পুলিশের চাকরি করে এলাকায় শাসকদলের হয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। ওঁর নামে আমরা বারবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশ কিছু করেনি। শুক্রবারের ঘটনারও মূল অভিযুক্ত সঞ্জীব। আইসি ৭২ ঘণ্টা সময় নিয়েছেন। এর পরেও যদি অভিযুক্ত গ্রেফতার না হয়, তা হলে আমরা বড় আন্দোলনে যাব।’’ সঞ্জীবের দাবি, ‘‘ঘটনার সঙ্গে আমি যুক্ত নই। আমি বিজেপি ও তৃণমূলের গোলমাল থামাতে গিয়েছিলাম। বিজেপির লোকেরা আমাকে মারতে এলে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি। ওরা নিজেরাই মারপিট করে হাসপাতালে ভর্তি হয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে বিজেপি নানা ভাবে আমার ওপর আক্রমণ করছে। শুক্রবার রাতে বিজেপির লোকজন আমার বাড়ি ভাঙচুর করে এবং আমার মাকে মারধর করে।’’ যদিও এই হামলা নিয়ে সঞ্জীব বা তৃণমূলের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ও সঞ্জীবের বাড়িতে বিজেপির হামলার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘ওরা আমাদের দলের পতাকা-ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলে দেয়। ভোটে হার নিশ্চিত জেনে ওরা এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’’ সঞ্জীবের বাড়িতে হামলার অভিযোগ বিজেপি মানেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে শ্যামসুন্দরচকের বারোয়ারি পুজো মণ্ডপে কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কারণে মণ্ডপটি গেরুয়া-সাদা রঙের কাপড়ে সাজানো হয়েছিল। উদ্যোক্তাদের অনেকেই বিজেপি কর্মী-সমর্থক। কিন্তু মণ্ডপের কাপড়ের ওই রং দেখে শুক্রবার সকালে আপত্তি জানান গ্রামের কয়েকজন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। দু’পক্ষের বচসা অবশ্য কিছুক্ষণ পরে থেমে যায়। কিন্তু এ নিয়ে রাতে তেতে ওঠে গ্রাম।
সঞ্জীব রাতে তৃণমূল সমর্থকদের নিয়ে ওই মণ্ডপে চড়াও হয়ে বিজেপি কর্মীদের মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়। তার মধ্যেই এক ফাঁকে সঞ্জীব তরোয়াল বের করে আস্ফালন শুরু করেন এবং তার আঘাতে যাদব প্রামাণিক এবং অতুল কয়াল নামে দুই বিজেপি কর্মী গুরুতর আহত হন বলে অভিযোগ। তাঁদের উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার পরে সঞ্জীবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী। তাঁদের মধ্যে দুই মহিলা বলেন, ‘‘সঞ্জীব পুলিশে চাকরি করেন বলে প্রায়ই গ্রামবাসীকে চমকান। কথায় কথায় আগ্নেয়াস্ত্র বের করে মানুষকে ভয় দেখান।’’