একসাথ: কাগজের কাপের চায়ের মৌতাত। নিজস্ব চিত্র
এখানে সব প্রশ্নেই তর্ক-বিতর্ক জমে। মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? মেসি বড় না রোনাল্ডো? অমিতাভ না শাহরুখ? মমতা-মোদী তো আছেই। ভোটের দিন এগিয়ে আসছে। রাজনীতির সেই তর্কই আরও প্রবল হচ্ছে এখানে। ঠিকানা— চায়ের দোকান। আজ আরামবাগ থানার সামনে শহরের অন্যতম পুরনো শরতের চায়ের দোকান। কান পাতলেন পীযূষ নন্দী
ফোড়নটা দিয়েছিলেন চা-দোকানি শরৎ দাসই, “এ বার ভোট-কেত্তন বিশেষ জমবে বলে মনে হচ্ছে না।”
ক্রেতারা হইহই করে উঠলেন। নানা জন নানা দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন। শুরু হয়ে গেল ভোটের তরজা। তবে প্রতি কথায় সতর্কতার সঙ্গে। কারণ, ভোটের আরামবাগের বাস্তবতা অন্য রকম, বললেন সকলেই।
মাধব দে (জমি ব্যবসায়ী): ভোটাররা বোধহয় এ বার অনেকটাই বিভ্রান্ত। কাকে ভোট দেবেন, ঠিক বুঝতে পারছেন না। সবাই জেনে গিয়েছি, প্রতিবার ভোটটা দিচ্ছি আর নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারছি। ছ্যা-ছ্যা।
তারকনাথ সিংহ (চাষি): কোনও দলের উপরেই ভরসা নেই। গতবার দু’বিঘা আলু চাষের ক্ষতিপূরণ পাইনি। এ বারও দু’বিঘায় লোকসান হয়েছে ২০ হাজার টাকা। কৃষক মরছে, এ দিকে কাগজে আর টিভিতে শুধুই নেতাদের দুর্নীতির খবর।
মাধব দে: কাগজ-টিভিতে দেখতে হবে কেন? চোখের সামনে যাঁরা আছেন, এমনকি পাড়ার চুনোপুঁটি নেতাগুলোরও ভোল পাল্টে গিয়েছে। নড়বরে সাইকেল আর বিড়ি ফুঁকে বেড়ানো ছেলেগুলো এখন মোটরবাইক, গাড়ি, বাড়ি করে ফেলছে। রাজনীতিতে সাধু লোক আর নেই। তবে, এখন
ভোট এসে গিয়েছে। সব দলই খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। প্রচ্ছন্ন হুমকিও শুনতে হচ্ছে, ‘ভোটটা ঠিকমতো দেবে’।
রজত চক্রবর্তী (অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী): রাজনৈতিক দলগুলির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পর্যালোচনা করলে সত্যিই সব গুলিয়ে যায়। কারও কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। স্বচ্ছতাও নেই। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার এক রকম বলে, আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগ এক রকম বলে। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে আমাদেরও ভোটের মাধ্যমেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।
ফারুক মল্লিক (লটারি টিকিট বিক্রেতা): দেশময় কাচের টুকরো ছড়ানো। আমরা হিরে খুঁজলে পাব কোথায় দাদা? এখন আর ভোট নিয়ে আগের আবেগ নেই, ফল প্রকাশের দিনে যে টেনশন থাকত, তা-ও নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর খেলনা হয়ে গিয়েছি আমরা।
তারকনাথ সিংহ: ভোটের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাটা ভাল বলেছেন রজতদা। ভোট দিয়ে তুলনামূলক কম খারাপ লোককে খুঁজে পেতে হবে। নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা কতটা হয় সেটাই দেখার। আচ্ছা দাদা, জিএসটি আর নোটবন্দি নিয়ে দেশের ক্ষতির
কথাগুলো সবাই বলছে। ওটা কী এবং কতটা ক্ষতি?
রজত চক্রবর্তী: ব্যবসায়ীরা বলতে চাইছেন, একে বেকারদের চাকরি নেই। তাঁরা যে ব্যবসা করে খাবেন, সেখানেও জিএসটি-র ফ্যাচাং। তিন মাস অন্তর জিএসটি রিটার্ন দিতে ফালতু টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। নোটবন্দি নিয়ে সরকার এক রকম বলছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আর এক বলছে। এইসব বৈপরীত্য নিয়ে ধন্দ।