এক প্রার্থী সকালে রাস্তায় বসে আলপনা আঁকলেন। বিকেলে আর এক প্রার্থী ঢাকির দল, ঘোড়া নিয়ে প্রচারে নেমে অবাক করলেন সকলকে।
সোমবার বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন এ ভাবেই ভোট-প্রচারে নতুনত্বের ছোঁয়া আনলেন দুই জেলার দুই মহিলা প্রার্থী।
তখন সকাল সাড়ে ৭টা। ব্যবসায়ীদের কেউ দোকানের হালখাতা পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কেউ সবে দোকানে পৌঁছেছেন। চায়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে বসে পড়লেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগ। হাতে তুলে নিলেন রং-তুলি। রাস্তায় এঁকে ফেললেন আলপনা। প্রার্থীকে আঁকতে দেখে থ অনেকেই। কিছুক্ষণ পরে সেখান থেকে উঠে অবশ্য বাড়ি বাড়ি প্রচারে বেরিয়ে পড়েন রত্নাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা বছরের প্রথম দিনটাকে স্বাগত জানাতেই আলপনা আঁকার পরিকল্পনা করেছিলাম।’’
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সোমা রানিশ্রী রায় এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ বাউড়িয়ার ময়লাপুকুর থেকে প্রচার শুরু করেন। সামনে একটি ঘোড়ায় সওয়ার এক কংগ্রেস কর্মী। তাঁর মাথায় দলায় পতাকা। পিছনে হুডখোলা গাড়িতে আসীন সোমাদেবী। তাঁর দুই পাশে আমতার দলীয় বিধায়ক অসিত মিত্র এবং উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী আলম দেইয়ান। তৃতীয় ও চতুর্থ গাড়িতে ঢাকির দল। ময়লাপুকুর থেকে এ ভাবেই বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন কংগ্রেস প্রার্থী।
এ দিন এ ভাবে প্রচারের পরিকল্পনা সোমাদেবীরই। তিনি বলেন, ‘‘নতুন বছরকে বরণের মধ্যে দিয়ে আমরা ভোট প্রচারের পরিকল্পনা করি। যেহেতু সকালে অনেকেই ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে বাড়ির মহিলারা, তাই আমরা বিকেলে প্রচার করি।’’
এই দু’জন ছাড়া দুই জেলার আর কোনও প্রার্থীর প্রচারে আলাদা মাত্রা দেখা যায়নি। আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার বিকেলে হরিণখোলার দু’টি অঞ্চলে রোড-শো করেন। সন্ধ্যায় খানাকুলের মেলাতে যান। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সকালে বাড়িতে পুজো এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতে হয়েছে বলে নির্বাচনী প্রচারে কিছুটা খামতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক দিনভর হরিপাল বিধানসভা কেন্দ্রের ৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচার করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রচারে চমকের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোই আমার লক্ষ্য।’’ কংগ্রেস প্রার্থী জ্যোতিকুমারী দাসও হরিপাল বিধানসভা এলাকায় পড়া সিঙ্গুরের দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় ঘোরেন।
তবে, বিজেপি প্রার্থী তপন রায়ের প্রচার পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে প্রবীণদের। সকালে নিজের গ্রাম গোঘাটের কামারপুকুর বেলেপাড়া এবং সংলগ্ন কাপসিট ও টাঁড়ুই গ্রামে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান তপনবাবু। বড়দের সঙ্গে দেখা হলেই প্রণাম করেছেন। ‘জ্যাঠাবাবু’, ’কাকাবাবু’ সম্মোধনে ডেকেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নরেন্দ্র মোদীর মুখোশ পরা জনাষাটেক দলীয় কর্মী। টাঁড়ুই গ্রামের শীতল মালিক নামে এক বৃদ্ধ বলেন, “আগে এ ভাবেই প্রণাম করে ভোট চাইতেন প্রার্থীরা।’’
হাওড়ার উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদ এ দিন প্রচারেই বেরোননি। নিমিদিঘির বাড়ি থেকে তিনি সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। সিপিএম প্রার্থী মাকসুদা খাতুন বাগনানে প্রচার করেন। বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় মনসাতলায় দলীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গল কামনায় যজ্ঞের আয়োজন করেন। বাড়ি বাড়ি প্রচারে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিশ আলি। ছোটদের তিনি চকোলেট দেন। ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লা চেঙ্গাইল এবং উলুবেড়িয়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেন।