প্রচারে খামতি, ক্ষোভ কংগ্রেসের নিচুতলায়

কংগ্রেস কর্মীদের অনেকেই মেনে নিচ্ছেন, কাজ নেই। কারণ, দায়িত্বই দেওয়া হয়নি। কারও দাবি, প্রচারে ডাক মেলেনি। সব মিলিয়ে নিচুতলার একাংশে অসন্তোষ স্পষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, দলের প্রার্থী ঘোষণার আগেই অধিকাংশ দেওয়াল ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

আগামী সোমবার হুগলি জেলায় ভোট। বিজেপির নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা সভা করতে আসছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চষে বেড়াচ্ছেন। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, মানিক সরকাররা প্রচারে হাজির। কিন্তু এআইসিসি বা প্রদেশ নেতারা কই? প্রশ্ন ভোটদাতাদের নয়, কংগ্রেস কর্মীদেরই। কিন্তু প্রার্থীরা এ নিয়ে ভাবিত নন।

Advertisement

কংগ্রেস কর্মীদের অনেকেই মেনে নিচ্ছেন, কাজ নেই। কারণ, দায়িত্বই দেওয়া হয়নি। কারও দাবি, প্রচারে ডাক মেলেনি। সব মিলিয়ে নিচুতলার একাংশে অসন্তোষ স্পষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, দলের প্রার্থী ঘোষণার আগেই অধিকাংশ দেওয়াল ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ফ্লেক্স-পোস্টারও সে ভাবে মেলেনি। দলের কৃষক সংগঠনের জেলা নেতা কার্তিক মুন্সির কথায়, ‘‘জনাই, বরিজহাটি, বাকসায় দেওয়াল লিখেছি। কিন্তু পোস্টার-ফ্লেক্স কোথায়? মিটিং-মিছিলও হচ্ছে কই! বুথ স্লিপ পাইনি। বিলি করব কবে?’’ আর এক কর্মীর কথায়, ‘‘সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সি, গৌরব গগৈরা চুঁচুড়ায় আইন অমান্য করলেন। অথচ, ভোটে কারও দেখা নেই।’’

শ্রীরামপুরের এক কংগ্রেস কর্মীর কথায়, ‘‘তৃণমূল-বিজেপির মোকাবিলায় যেমন দরকার, সে ভাবে এগোনো হচ্ছে না। আগামী বছর পুরভোট। নিজেদের উদ্যোগেই যতটা সম্ভব করছি।’’ শহরের কংগ্রেস নেতা উদয় ভৌমিকের কথায়, ‘‘বলতে দ্বিধা নেই, এ বার আমরা

Advertisement

কিছুটা অগোছালো।’’

গত লোকসভা নির্বাচ‌নে শ্রীরামপুরের প্রার্থী আব্দুল মান্নানের হয়ে জাঙ্গিপাড়া বিধানসভার দায়িত্বে ছিলেন‌ রিষড়ার সাবির আলি। এ বার তাঁর কার্যত দেখা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে ভোট করছি। এমনটা দেখিনি। কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। পথেঘাটে মানুষের প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়ছি।’’

গতবার হুগলিতে প্রার্থী ছিলেন প্রিতম ঘোষ। শেওড়াফুলির বাসিন্দা, পোড়খাওয়া এই নেতা হুগলিতে প্রচারে গরহাজির। তাঁর অনেক অনুগামীও তাই। শনিবার মোবাইলে প্রিতমবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের সময় তিনি বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর হয়ে প্রচার করছিলেন। হুগলিতে প্রচারে নেই কেন? প্রিতমবাবুর জবাব,

‘‘ডাক পাইনি।’’

প্রিতমবাবুর সঙ্গে মান্নানের দূরত্ব কংগ্রেসের অন্দরে কারও অজানা নয়। অধীরবাবু প্রদেশ সভাপতি থাকার সময় প্রিতমবাবুকে জেলা কংগ্রেসের ‘কো-অর্ডিনেটর’ পদে বসিয়েছিলেন। এখন সেই পদ নেই। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা কংগ্রেসের কর্তৃত্ব এখন মান্নানের হাতে। এই সমীকরণই প্রিতমবাবুদের দূরত্বের কারণ।

কী বলছেন প্রার্থীরা?

শ্রীরামপুরের প্রার্থী দেবব্রত বিশ্বাস প্রশ্ন শুনে বেজায় ক্ষিপ্ত। তিনি বলে দেন, ‘‘ভোটের কয়েক দিন আগে যাঁরা খবরের কাগজে দলের প্রচার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তাঁরা কংগ্রেসের কেউ বলে মনে করি না। তাঁরা উৎকোচ গ্রহণ করে অন্য দলের হয়ে কথা বলেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রকৃত কংগ্রেস কর্মীরা সঙ্গেই আছেন। নরেন্দ্র মোদীকে হটাতে রাহুল গাঁধীর পক্ষে ভোট গেলে একই ফল এখানেও হবে। অসুস্থতা সত্বেও আব্দুল মান্নান আমার হয়ে প্রচারে বেরোচ্ছেন।’’ হুগলির প্রার্থী প্রতুলচন্দ্র সাহার বক্তব্য, ‘‘ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং সংকীর্ণ রাজনীতির জন্য হাতেগোনা দু’-এক জন প্রচারে নামেননি ঠিকই। তবে এতে কংগ্রেসের ক্ষতি হবে না। রাহুল গাঁধীর হাওয়া এখানেও বইছে। অধিকাংশ কর্মী উজ্জীবিত। মানুষের সাড়াও ভালই পাচ্ছি।’’ তিনি জানান, আগামী শুক্রবার দলের প্রদেশ সভাপতি সোমেনবাবু এবং এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা গৌরব গগৈ জিরাট এবং ভদ্রেশ্বরে সভা করবেন।

গত লোকসভা ভোটে এই জেলায় কংগ্রেসের স্থান ছিল চতুর্থ। এ বার কী হবে, আগামী ২৩ মে-ই জবাব মিলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement