প্রতীকী চিত্র
লকডাউন। যেন আক্ষরিক অর্থে ঘরে তালাবন্দি থাকা। যেখানে আমার বাড়ি, সেই উদয়নারায়ণপুরে ফি-বছর বন্যার জন্য ছাদে থাকা কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু এ বার বন্যা বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। একেবারে অন্য কারণে ঘরে এতদিন বন্দি থাকতে হচ্ছে। এমন অভিজ্ঞতা আমার ৬৫ বছরের জীবনে প্রথম।
বছর পাঁচেক হল চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। চাকরি জীবনের কথা ছেড়েই দিচ্ছি। তখন তো বাইরেই কেটে গিয়েছে অধিকাংশ সময়। অবসর জীবনেও একেবারে ঘরবন্দি হয়ে যাইনি। রোজ সকালে হাঁটতে যেতাম দামোদরের তীরে। সেখান থেকে ফেরার পথে বাজার করে আনতাম। তারপরে কিছু খেয়ে বেরিয়ে যেতাম বাজারে, বন্ধুর দোকানে বসে আড্ডা দিতে। দুপুরে ফিরে এসে ভাত খেয়ে টানা ঘুম। বিকেলে সাধারণত আর বেরোতাম না।
কিন্তু লক ডাউনের পর থেকে আমার বাইরে বেরনো একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভোর ৫টায় উঠে পড়ি। হাঁটি বাড়ির উঠোনে। তারপরে নিজেই বাড়ির সকলের জন্য চা করি, নিজেও খাই। চা খেয়ে বানাতে বসে যাই আলুসেদ্ধ বা আলুভাজা। মুড়ির সঙ্গে ওটা খেতে বেশ লাগে। বেলা ১১টা নাগাদ স্নান করে ফেলি। তারপরে বসি রামকৃষ্ণ কথামৃত নিয়ে। আগেও পড়তাম। তবুও লকডাউনের পরিবেশে সব যখন সুনসান, তখন কথামৃত যেন আমাকে নতুন করে শক্তি জোগায়।
বাজার করে আনে ছেলেরাই। আমি বাড়ি থেকে বেরোই না। কথামৃত পড়ার পরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। তারপরে টানা ঘুম। বিকেলে উঠে ফের কিছুক্ষণ কথামৃত পড়া।
বন্ধু-পরিচিতদের ফোন করা। এই করেই সময় কেটে যাচ্ছে। এই কয়েকদিন ঘরে বন্দি থেকে বুঝলাম মানুষ আসলে অভ্যাসের দাস। না হলে আমি যেখানে হাঁটা, বাজার করতে যাওয়া, আড্ডা মারতে যাওয়া ছাড়া থাকতে পারতাম না, সেখানে সব বাদ দিয়ে কেমন ঘরে বসে আছি। একটুও অসুবিধা হচ্ছে না।
যাঁরা রাস্তায় ঘুরছেন তাঁদের উদ্দেশে বলছি, চেষ্টা করলেই থাকতে পারা যায়। তাতে দেশের ও দশের সুবিধা।
লেখক: উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত কর্মী