নামেই পরিশোধিত পানীয় জল। কিন্তু সেই পানীয় জলই হয়ে উঠছে অসুস্থতার কারণ। ঘোলা নোনতা জল মুখে তোলাই দায়। তাই বাধ্য হয়ে গাঁটের কড়ি খরচ করে বাজার থেকে পরিস্রুত পানীয় জল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন উলুবেড়িয়া পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা।
তবে কী কারণে পুরসভার তরফে দেওয়া জল ঘোলা ও নোনতা হচ্ছে? এ নিয়ে দুই পুরকর্তা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) তৃণমূলের আকবর শেখ বলেন, ‘‘গঙ্গা থেকে জল তুলে পরিশোধন করেই তা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ফরাক্কায় জলস্তর কমে যাওয়ায় গঙ্গায় বহু পরিমাণে নোনতা জল ঢুকে পড়ছে। সে কারণেই এই সমস্যা।’’ তবে তা অস্বাস্থ্যকর নয় বলেই দাবি তাঁর। অন্য দিকে, খোদ চেয়ারম্যান অর্জুন সরকার বলেন, ‘‘সম্প্রতি জলের রিজার্ভার ও পাইপ লাইন পরিষ্কার করা হয়েছে। তাই সেখানে থাকা জমে থাকা নোংরাগুলি বের হচ্ছে। দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।’’
পুরবাসীর অভিযোগ, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘোলা পানীয় জল পাচ্ছেন। সঙ্গে নোনতা স্বাদ। তবুও তা ব্যবহার করা যাচ্ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে ঘোলা ও নোনতা ভাব আরও বেড়ে গিয়েছে। বাউড়িয়াতে এর প্রকোপ বেশি। স্বাভাবিক ভাবে এই দূষিত জলের কারণে পেটের রোগ বাড়ছে। বুধবার সকালেই বাউড়িয়ার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পেটের রোগের ওযুধ নিতে আসা রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। পানীয় জলের মতো জরুরি পরিষেবা নিয়ে পুরসভার উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনে পুরবাসীর প্রশ্ন, তা হলে ওই নোংরা জল কেন সাধারণ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে? বিকল্প কোনও ব্যবস্থাই বা করা হয়নি কেন? তা হলে কি ইচ্ছে করে এই কাজ করছে পুরসভা? ভোটের মুখে এই বিষয়কে কাজে লাগাতে একটুকুও সময় নেয়নি বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, সমস্যা সমাধানের কোনও ইচ্ছা নেই। একে তো চেয়ারম্যান জেনে শুনে লোকের ক্ষতি করছেন। উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের জোটের প্রার্থী তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘পানীয় জলের মতো জরুরি পরিষেবা নিয়ে পুরসভা উদাসীনতা দেখাচ্ছে। নোনতা জল বলে অজুহাত দিচ্ছেন তাঁরা। কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায় তার কোনও পথ বের করছেন না। আর জলের পাইপ লাইনে নোংরা পরিষ্কার করতে এত সময় লাগবে কেন।’’
জল নিয়ে যখন রাজনীতিতে জলঘোলা হচ্ছে, তখন বুধবার বিকেলেই আকবর শেখ দাবি করেছেন, পরিষ্কার জল সরবরাহ করা হচ্ছে। সমস্যা মিটে গিয়েছে। যদিও এ দিন সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই ভাবে বিকেলেও নোনতা ও ঘোলা জল পড়েছে পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিরোধীদের প্রশ্ন? তা হলে কেন নানা সময় ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন আকবর শেখ? এই সব প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি পুরসভার কাছ থেকে। চেয়ারম্যান শুধু বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’’