দে়হের খোঁজে পুকুরে তল্লাশি। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র
হাওড়ায় ঘটা করে পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। কিন্তু তাদের বিপর্যয় মোকাবিলার হালটা যে আদতে কতটা বিপর্যস্ত, শনিবার সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নরসিংহ দত্ত কলেজের পুকুরে ডুবে এক পড়ুয়ার মৃত্যু।
বৃষ্টির পরে জল থইথই কলেজ চত্বরে বল নিয়ে লোফালুফি খেলছিলেন এক দল পড়ুয়া। জমা জলে মাঠ এবং পাশের পুকুর এক হয়ে গিয়েছে বুঝতে না পেরেই পড়ে গিয়ে তলিয়ে যান মহম্মদ আক্রম (১৯) নামে ওই তরুণ। কিন্তু বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি ডুবে গেলেও দেহ উদ্ধার করতে তিন ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে খবর পেয়ে দমকল ও পুলিশ এলেও তাঁদের সঙ্গে কোনও ডুবুরি ছিলেন না। পরে পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসে জলে নামে বটে, কিন্তু প্রশিক্ষিত ডুবুরি ছাড়াই। সন্ধ্যা ছ’টার পরে উদ্ধার করে আক্রমকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এক পড়ুয়ার ডুবে যাওয়ার খবর পেয়েও ডুবুরি এল না কেন?
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের ডুবুরি নেই। প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয় অথবা স্থানীয় কিছু লোকের সাহায্য নেওয়া হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের নিজস্ব বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি থাকলেও আমাদের তা নেই। আমরা সরকারের কাছে এ নিয়ে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’ এ দিন কলকাতা পুলিশের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি। পুলিশ জানায়, স্থানীয় নুর মহম্মদ মুিন্স লেনের বাসিন্দা আক্রম ওই কলেজেই বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ইন্দ্রনীল পাছাড় নামে এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘বলটা জলে পড়েছিল। আক্রম তুলতে গিয়ে আচমকা তলিয়ে যায়।’’ ওই কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক— সকলেই বলছেন, বৃষ্টি হলে হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজ চত্বরে জল জমাটাই ‘রীতি’। এ দিন আক্রমের মৃত্যুর পরে কলেজের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কলেজের ভিতরেই এ ভাবে জল জমবে কেন? এ নিয়ে কার্যত পুর-প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের অভিযোগ, কলেজের পাশে একটি বিনোদন পার্ক মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। সেখান থেকে জল এসে কলেজে জমা হয়। কিন্তু সেই জল বেরোনোর কোনও উপায় নেই। স্থানীয় বেলিলিয়াস রোডের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হওয়ার জন্যও কলেজে জল জমে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, জমা জল বের করতে দু’টি পাম্প চালান তাঁরা। কিন্তু লাভ হয় না।
হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) শ্যামল মিত্রের পাল্টা দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনও দিন তাঁদের কিছু জানাননি। জানলে পুরসভার তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হত। শ্যামলবাবুর বক্তব্য, ‘‘কলেজের ভিতরে নিকাশির সমস্যা থাকলে সেটা পূর্ত দফতরের দেখার কাজ। তবুও কলেজ কর্তৃপক্ষ যে সমস্যার কথা বলেছেন তা খতিয়ে দেখা হবে।’’