বন্ধ চটকল, শ্রমিকদের সন্তানের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

কার্যত এক বছর ধরে বন্ধ চন্দননগরের গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক পরিবারের বেশ কিছু ছেলেমেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক অথবা স্নাতক স্তরে পড়ার জন্য আর্থিক সাহায্য করছে ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ নামে শহরের একটি সংগঠন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০১:৪৮
Share:

ওদের পরিচয়— বন্ধ চটকল শ্রমিকের সন্তান। কেউ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক পাশ করেছে। কেউ উচ্চ মাধ্যমিক। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। ফলে, পরবর্তী পড়াশোনা নিয়ে ওদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

Advertisement

কার্যত এক বছর ধরে বন্ধ চন্দননগরের গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিক পরিবারের বেশ কিছু ছেলেমেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক অথবা স্নাতক স্তরে পড়ার জন্য আর্থিক সাহায্য করছে ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ নামে শহরের একটি সংগঠন। অন্যেরাও যাতে পড়াশোনা চালাতে পারে, সে জন্য প্রশাসন এবং পুরসভাকে আর্থিক

সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছে সংগঠনটি।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই চটকলের শ্রমিক পরিবারের অন্তত দেড়শো ছেলেমেয়ে এ বার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। কিন্তু পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি হওয়া, বই কেনা, টিউশন খরচ কোথা থেকে জোগাড় হবে, ভেবে পাচ্ছে না পরিবারগুলি। পরিবেশ অ্যাকাডেমির সদস্যেরা জানান, ১০৭ জন ছাত্রছাত্রী তাঁদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, আগামী শনিবার শহরের জ্যোতিন্দ্রনাথ সভাগৃহে এক অনুষ্ঠানে ৩১ জন পড়ুয়ার হাতে এক হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘যেটুকু পারছি, করছি। কিন্তু প্রয়োজনটা অনেক বেশি। তাই পুরসভা বা প্রশাসনের এগিয়ে আসা দরকার। না হলে অর্থের অভাবে অনেকেরই পড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’’

ওই চটকল শ্রমিকদের অনেকেই শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এখানকার প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর তথা ওই চটকলেরই কর্মী রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘শ্রমিক পরিবারগুলি দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অনেকে জোগাড়ের কাজ করে সামান্য টাকা ঘরে আনলে উনুনে হাঁড়ি চাপছে। পেট চালাতেই এমন অবস্থা, ওঁরা ছেলেমেয়েদের পড়াবেন কী করে! নাগরিকদের তরফে পরিস্থিতির কথা প্রশাসন, পুরসভায় জানানো হয়েছে।’’ চন্দননগরের পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু জানান,

মেধাবী পড়ুয়া বেছে দীর্ঘমেয়াদি সাহায্য করার ব্যাপারে পুরসভা চিন্তাভাবনা করবে। রাহুল ঠাকুর নামে এক তরুণ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। সে দূরশিক্ষায় হিন্দি অনার্স নিয়ে পড়তে চায়। তার আক্ষেপ, ‘‘মিল বন্ধ থাকায় বাবা সেলুনে কাজ করছে। কিন্তু ওই রোজগারে পড়ার খরচ চালাবে কী করে! টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হইনি।’’ রাহুলের দুই ভাইয়ের এক জন আগামী বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। রাহুলের কথায়, ‘‘আমার মতো অনেকেরই পড়াশোনা প্রশ্নের মুখে।’’ শীতল দাস নামে এক তরুণী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ইংরেজি অনার্স নিয়ে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা চার বোন। সকলেই পড়াশোনা করে। এক জন মাধ্যমিক পাশ করেছে। শীতলের কথায়, ‘‘বাবা রোজ সকালে কাজের খোঁজে বেরোয়। কিন্তু প্রতিদিন কাজ জোটে না। আমি ছাত্র পড়াই। এখানে এমন অবস্থা, সবাই নিয়মিত টাকা দিতে পারে না। আমাদের যা অবস্থা, বলে বোঝাতে পারব না। এ ভাবে কত দিন চলবে, জানি না।’’

গত বছরের ২৭ মে গোন্দলপাড়া চটকলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলে। লোকসভা ভোটের সময় কয়েক দিনের জন্য মিল খোলে। ফের বন্ধ হয়ে যায়।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement