সমস্যা জানাতে গোঘাটের বিধায়কের কার্যালয়ে গ্রামবাসী। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
দিনকয়েক আগে গোঘাটের খানাটি গ্রামে গণেশ রায় নামে এক বিজেপি কর্মীর অপমৃত্যুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। রাতারাতি গণেশের পরিবার তিনটি জবকার্ড পেয়েছিল তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের হস্তক্ষেপে। এ বার গ্রামের জন্যেও ‘কল্পতরু’ হলেন বিধায়ক! দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তা, আলো, পানীয় জলের কল-সহ গ্রামোন্নয়নের নানা দাবি তুলছিলেন। শনিবার সকালে তাঁরা গোঘাটে বিধায়কের অফিসে গিয়ে সেই দাবি জানানো মাত্র বেশিরভাগই মঞ্জুর হয়ে গেল। বিধায়ক বলেন, “গ্রামবাসীরা কিছু বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে চারটি কংক্রিটের রাস্তা, একটি পানীয় জলের কল, দু’টি আলো এবং গ্রামের মনসাতলা সংলগ্ন পুকুরের ঘাট বাঁধাই দ্রুত করতে বলেছি পঞ্চায়েতকে। আরও জবকার্ডেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলা হবে।”
ওই গ্রামটি গোঘাট পঞ্চায়েতে। ক্ষমতায় তৃণমূল। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তহবিলের অভাব থাকলেও বিধায়কের নির্দেশমতো আগামী সপ্তাহেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। দিনকয়েক আগে গোঘাট রেলস্টেশনের কাছে একটি গাছের ডাল থেকে গণেশের ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল। এই অপমৃত্যু নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর এখনও বন্ধ হয়নি। তৃণমূল খুনের অভিযোগ উড়িয়ে ঘটনার পিছনে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে দাবি করে। এর মধ্যে গ্রামোন্নয়নে বিধায় কের এমন ‘তৎপরতা’য় গ্রামবাসীদের অনেকেই অবাক হয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, সামনে বিধানসভা ভোট। এলাকায় বিজেপির প্রভাব যাতে বাড়তে না-পারে এবং গণেশের অপমৃত্যু নিয়ে শোরগোল ঠেকাতে এই তৎপরতা। তাঁরা জানান, একই কারণে গণেশের মৃত্যুর দিন বিকেল থেকে বিজেপি নেতাদের আসা ঠেকাতে বিধায়ক এবং তাঁর দলবল গ্রামে ছিলেন শুক্রবার রাত পর্যন্ত। একই কারণে গণেশের পরিবারকে তিনটি জবকার্ড বিলি।এ নিয়ে প্রশ্ন সরাসরি এড়িয়ে গিয়েছেন বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা কেউ আমার নজরে আনেননি। পঞ্চায়েতের তহবিলেরও অপ্রতুলতা রয়েছে। তা ছাড়া, গণেশের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার এবং গ্রামে যদি উন্নয়ন হয়, তাতে অসুবিধা কী?’’
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ মনে করছেন, এটা তাঁদের ভোট কেনার রাজনীতি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের কর্মী খুনের ঘটনায় নিজেদের অপরাধ ঢাকতেই তড়িঘড়ি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিধায়ক। কিন্তু ওই গ্রামে বিজেপির সংগঠনে কোনও হেরফের হবে না।’’ এ দিন সকালে যে সব গ্রামবাসী বিধায়কের কাছে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তাপস রায় বলেন, “গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে এতদিন কেউ গ্রাহ্য করেনি। গণেশের মৃত্যুতের টনক নড়েছে।” অশোক রায় নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘বিধায়ক সব দাবিই পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। এতদিন ওই সব কাজের জন্যই গণেশ এবং আমরা জুতোর সুকতলা খুইয়েছি।” সাহেব রায় এবং সহদেব রায় নামে দুই গ্রামবাসী বলেন, ‘‘এতদিন জবকার্ড দেওয়া নিয়ে পঞ্চায়েত এবং ব্লক থেকে প্রচুর বাহানা দেওয়া হত। অথচ, রাতারাতি যে জবকার্ড হয় তার প্রমাণ মিলল।’’