Baidyabati

বন্ধ কারখানায় ‘উৎপাদন’ চলছে জোরকদমে

এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘শ্রমিকদের ফাওলাইয়ের টাকা পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনার স্তরে আছে।’’

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

বৈদ্যবাটী শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৬:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

খাতায়-কলমে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ চলছে বৈদ্যবাটীর লগন জুট মেশিনারিতে। তবে অভিযোগ, কম মজুরিতে শ্রমিকদের দিয়ে সেখানে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। করোনা-পরিস্থিতিতে হাতে টাকা না-থাকায় বাধ্য হয়েই দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে চলেছেন মজুরেরা।

Advertisement

বিষয়টি শ্রম দফতরের নজরে এনেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তবে কোনও প্রতিকার এখনও মেলেনি বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছেন শ্রমিকেরা। অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানার মালিক সঞ্জয় কাজোরিয়াকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার তাঁর মোবাইলে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের-ও উত্তর মেলেনি।

এক সময় লগন জুট মেশিনারিজ় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে একটি লাভজনক সংস্থা ছিল। হুগলির মগরাতে প্রতিষ্ঠানের আরও একটি শাখা রয়েছে। রাজ্যে যে সব জুটমিল চলছে, তার যন্ত্রাংশ তৈরির করে এই সংস্থা। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে অন্তত ২৫০ শ্রমিকের রুটি-রুজির
ঠিকানা ছিল এই প্রতিষ্ঠান। ২০০০ সালে কারখানাটি ব্যাক্তি মালিকানায় চলে আসে।

Advertisement

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ কর্তৃপক্ষ বৈদ্যবাটীর কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলান। অভিযোগ, ওর কিছুদিন পরেই সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন চালু করেন। যদিও ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ নোটিস প্রত্যাহার করা হয়নি। কারখানার মেশিনশপ বিভাগের কর্মী সন্দীপ দাস বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, কারখানায় প্রথমে তিন জন, চার জন করে শ্রমিককে কাজে নেওয়া হচ্ছিল। তারপর সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে এখন অনেক হয়ে গিয়েছে। পুরোমাত্রায় উৎপাদন হচ্ছে কারখানায়। কিন্তু কর্মীদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০টাকা। পিএফ, গ্র্যাচুইটি জমা দেওয়ার কোনও বালাই নেই। খাতায় কলমে কারখানা বন্ধ। তাই সরকারি কর দেওয়ারও কোনও প্রশ্ন নেই।’’

এই বিষয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওই কারখানার শ্রমিকদের কথা হয়েছে। করোনার কারণে পরিস্থিতি খারাপ। অনেক শ্রমিক কাজ করতে চাইছেন। তাই শ্রম দফতরের সঙ্গে কথা বলে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইছি।’’

কারখানার সব শ্রমিক সেখানে কাজ পাননি। তাঁদের অনেকেই সমস্যায় রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে শ্রম দফতরের বিবেচনার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার শ্রমিকদের ‘ফাওলাই’ প্রকল্পে ভাতা দেয়।

তবে এখনও ওই কারখানায় সেই প্রকল্প চালু হয়নি। ইতিমধ্যেই কারখানার দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শ্রমিকেরা চন্দননগরের আইনি সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে শ্রমিকদের সমস্যা মেটানোর জন্য শ্রম দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তাতেও কিছু হয়নি। শ্রমিকেরা সরকারি অনুদান পান না। এ দিকে শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে।’’

এই বিষয়ে সংস্থার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল সংস্থার ফ্যাক্টরি ম্যানেজার শুভব্রত রায়ের সঙ্গে। তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বলেন, ‘‘আমি এই সব
বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। সংবাদমাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই।’’ চন্দননগর মহকুমা শ্রম দফতরের
এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘শ্রমিকদের ফাওলাইয়ের টাকা পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনার স্তরে আছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই কারখানার উৎপাদন চলা বা আদালতের কোনও নির্দেশ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement