প্রতীকী ছবি।
দুই বিধায়কের ‘কোন্দলে’ থমকে রয়েছে সিঙ্গুরে তৃণমূলের যাবতীয় কর্মসূচি। সিঙ্গুরের ব্লক সভাপতি পদ নিয়ে তৃণমূলের দুই বিধায়কের কোন্দল থামার কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ভোটাভুটি করে ব্লক সভাপতি নির্বাচনের দাবি উঠল তৃণমূলের অন্দরে।
সিঙ্গুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি মহাদেব দাসকে সরিয়ে দেওয়া দেওয়ার পর সিঙ্গুরে শাসকদল কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দলত্যাগের হুমকি দিয়ে রেখেছেন প্রবীণ দলনেতা তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। অন্য দিকে, মহাদেবকে যাতে ফের ওই পদে আনা না হয়, তার জন্য দলের উপরে চাপ তৈরিতে সচেষ্ট হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার গোষ্ঠী। দলের দুই নেতার আকচাআকচিতে বিভ্রান্ত দলের নিচুতলার কর্মীরা।
তৃণমূল পরিচালিত সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধাড়া মঙ্গলবার বলেন,‘‘আমাদের সাংগঠনিক কাজকর্ম সব থমকে আছে। এখনই বিষয়টির সমাধান হওয়া জরুরি। যখন একটা বিরুদ্ধ মত উঠে আসছে, তখন দুই বিধায়ক এবং সিঙ্গুর থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের তিন সদস্য ও পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে দ্রুত বৈঠক ডাকা উচিত জেলা নেতৃত্বের। তাতে সমাধান হলে ভাল। আর তা না-হলে সবাই মিলে ভোটাভুটি করা হোক। ভোটের রায় যাঁর পক্ষে যাবে, তিনিই ব্লক সভাপতি হবেন। তাঁকেই সকলে মেনে নেবেন।’’
কিন্তু এই প্রস্তাব রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হবে কিনা, তা নিয়ে ধন্ধ রয়েছে তৃণমূলে। কারণ, সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে থাকা বেশির ভাগ পঞ্চায়েতের প্রধানই বেচারামের অনুগামী। জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতিরও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বেচারাম-ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিত। এমনকী, যিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই দুধকুমারবাবু নিজেও বেচারামের ‘কাছের লোক’ বলে দলে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘হরিপালের বিধায়ক যদি সেখানকার ব্লক সভাপতি ঠিক করতে পারেন, তবে সিঙ্গুরের বিধায়ক কেন সিঙ্গুরের ব্লক সভাপতি ঠিক করতে পারবেন না?’’ তাঁর এই যুক্তিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না দলের নেতৃত্বের একাংশ।
ভোটাভুটির মাধ্যমে ব্লক সভাপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘কে ব্লক সভাপতি হবে, কী ভাবে হবে, তা দলের ব্যাপার। আমি আমার বক্তব্য স্পষ্ট করে আগেই জানিয়েছি।’’
এই প্রস্তাব সম্পর্কে বেচারামের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটস্অ্যাপেরও জবাব দেননি।
তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের সিংহভাগ চাইছেন দুই নেতার কোন্দলে ইতি টানুক জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। কারণ, বিধানসভা ভোট এদিয়ে আসছে। এই সময় দুই বিধায়কের চাপানউতোর জারি থাকলে আখেরে লাভ হবে বিরোধীদের। সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করে বেচারাম দাবি করেছিলেন, দলে ‘কোন্দলে’র গল্প সংবাদমাধ্যমের মস্তিষ্কপ্রসূত। সিঙ্গুরের বিধায়কের সঙ্গে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। তবে দলের নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন, বেচারাম এই দাবি করলেও বরফ গলার কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি।