ডিজে বক্স এবং শব্দবাজির বিরুদ্ধে পরিবেশপ্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। ফাইল চিত্র।
ঢাকের বাদ্যি আছে। উদ্দাম নাচও আছে। কিন্তু এ বার বিসর্জনে দুই জেলার অনেক জায়গা থেকেই উধাও হল ডিজে। স্বস্তি পেলেন প্রবীণ এবং অসুস্থ মানুষেরা। লাগাতার প্রচারেই এ বার সুফল মিলেছে বলে দাবি দুই জেলার পুলিশকর্তাদের। পরিবেশকর্মীরা চাইছেন, সর্বত্রই ডিজে-দৌরাত্ম্য বন্ধ হোক। শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, পারিবারিক অনুষ্ঠানেও এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করুক পুলিশ।
ডিজে বক্স এবং শব্দবাজির বিরুদ্ধে পরিবেশপ্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। পুলিশ মূলত কালীপুজোর আগে এ নিয়ে একপ্রস্থ ঢক্কানিনাদ করে। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয় না বলে অভিযোগ। এ বার দুর্গাপুজোর অনেক আগেই হুগলির একটি বিজ্ঞান সংস্থা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামে। পুলিশকে স্মারকলিপি দেওয়া, চুঁচুড়া-চন্দননগর শহরে পোস্টার সাঁটা এবং লিফলেট ছড়ানো হয়। কমিশনারেটের তরফেও প্রচার চলে। হাওড়া গ্রামীণ এলাকাতেও প্রচার চালায় পুলিশ।
ফল যে মিলেছে, তা মানছেন সাধারণ মানুষ। মানছেন পরিবেশপ্রেমীরাও। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই ডিজে বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, ‘‘হুগলিতে কয়েকটি জায়গায় ডিজে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এটা প্রচারের সুফল। সর্বত্র যাতে এটা হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিক।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিজে বক্স বাজার অভিযোগ হাতেগোনা কয়েকটি এসেছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সচেতনতা বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছি। ডিজে বাজানোর অপকারিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে বোঝানো হবে।’’ হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘পুজোয় সর্বত্র ডিজে বন্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশেষ প্রচার চালানো হয়েছিল। পুজো কমিটি ডিজে বাজাচ্ছে, খবরে পেলেই আমরা বন্ধ করেছি। বিসর্জনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।’’
চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর শহরের একাংশে পুজোকর্তাদের সচেতনতায় খুশি সাধারণ মানুষ। চন্দননগরের দিনেমারডাঙার বাসিন্দা সঞ্জীব দত্ত বলেন, ‘‘অন্য বার আওয়াজে কান পাতা দায় হয়। এ বার তা হয়নি। মনে হয়, প্রচারের ফলেই পুজোর লোকজন সচেতন হয়েছেন। সর্বত্রই প্রচার করলে সমস্যা থাকবে না।’’ গুপ্তিপাড়ার কুমোরপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘সচেতনতা বোধহয় একটু বেড়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজোতেও এই সচেতনতা দেখা গেলে হয়।’’ শ্রীরামপুর দুর্গাপূজা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের সদস্যপদ রয়েছে, এমন পুজো কমিটিগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ডিজে বাজানো নিয়ে তারা সমস্যায় পড়লে আমরা কোনও দায় নেব না। এ বার সত্যিই ডিজে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল।’’
তবে উত্তরপাড়া, কোন্নগর, মশাট, হরিপাল এবং সিঙ্গুরের নানা জায়গায় ডিজে বেজেছে। একটি নাগরিক সংগঠনের কর্তা, কোন্নগরের বাসিন্দা শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘কোন্নগর, উত্তরপাড়ার, ভদ্রেশ্বরের কয়েকটি জায়গায় তারস্বরে ডিজে বেজেছে। ভাসানের সময় গভীর রাত পর্যন্ত এই পরিস্থিতি ছিল। উদ্দাম নাচানাচি চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন।’’ বুধবার দুপুরেই বৈদ্যবাটীর এসসিএম রোডে একটি বিসর্জনের শোভাযাত্রায় তারস্বরে ডিজে বাজতে শোনা গিয়েছে।
রুপোর প্রতিমা বানিয়ে এ বার হাওড়া জেলায় ‘বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান’-এর শ্রেষ্ঠ প্রতিমার পুরস্কার পেয়েছে উলুবেড়িয়া লতিবপুর মিলন সঙ্ঘ। পুজোর দিনগুলিতে শব্দদূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করেছিলেন পুজোর উদ্যোক্তারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিসর্জনের সময়ে দেখা গেল, ওই পুজো কমিটিই একটি ছোট গাড়িতে তেরোটি মাইকের চোঙ ও ডিজে বাজিয়ে চলেছে। যা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক সাধারণ মানুষ। ক্লাবের সম্পাদক সৈকত দাস অবশ্য বলেন, ‘‘সদস্যদের অনুরোধে করা হয়েছিল ডিজের আওয়াজ কম রাখতে।’’ অনেকেই বলছেন, আসল পরীক্ষা কালীপুজোয়। তখন ডিজে-তে পুরো লাগাম পরে কিনা, সেটাই দেখার।