বেআইনি: এ ভাবেই তুলে নেওয়া হচ্ছে বালি। হরিণখোলায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড় থেকে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
ভূমি দফতর বলছে, সেতু থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যে নদীখাতের বালি তোলা নিষিদ্ধ। অথচ, গত কয়েক দিন ধরে ট্রাকে পূর্ত দফতরের বোর্ড লাগিয়ে আরামবাগের হরিণখোলায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর রামমোহন সেতুর গা ঘেঁষে যথেচ্ছ বালি তোলা চলছিল বলে অভিযোগ। তার জেরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, চাপানউতোর, থানা-পুলিশ— কিছুই বাদ গেল না।
আরামবাগ থেকে কলকাতাগামী রাজ্য সড়কটির চাঁপাডাঙা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করে চার লেনের কাজে ওই বালি ব্যবহার হচ্ছে। সেই বালি বেআইনি ভাবে তোলা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে এলাকাবাসীর একাংশ শুক্রবার ফোন করেছিলেন পূর্ত দফতরে। জানানো হয় ভূমি দফতর এবং এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানকেও। তা সত্ত্বেও শনিবার রাতে ফের বালি তোলা শুরু হতে কয়েকশো মানুষ গিয়ে পূর্ত দফতরের ‘অন ডিউটি’ বোর্ড লাগানো গাড়ি এবং ঠিকাদার সংস্থার লোকদের আটকে বিক্ষোভ দেখান। দিন সাতেক ধরে সাতশোরও বেশি ট্রাকে বালি তোলা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়।
হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুল আজিজ খানের মধ্যস্থতায় ওই রাতে ঠিকাদার সংস্থার অফিসাররা রেহাই পান। বিক্ষোভও থামে। কিন্তু প্রধানই প্রস্ন তুলেছেন, ‘‘রাস্তা-সহ সেতুর কাজ দ্রুত হোক আমরা সকলেই চাই। কিন্তু সেই কাজ করতে অনিয়ম হবে কেন?”
পূর্ত দফতর অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, ওই রাস্তার কাজ তারা করছে না। বালি তোলার কাজেও তারা নেই। কাজটি করছে পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগম। ট্রাকে তাদের দফতরের নাম লেখা বোর্ড ব্যবহার করে বালি তোলার কাজ চালানোয় শনিবার আরামবাগ মহকুমা পূর্ত দফতর থেকে মহকুমাশাসক এবং পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়।
মহকুমা পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় বলেন, ‘‘ওই কাজে পূর্ত দফতর নেই। অথচ পূর্ত দফতরের বোর্ড ব্যবহার হচ্ছে। এই বেআইনি কাজে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে দফতরকে দায়ী করছেন। পুলিশ এবং প্রশাসনকে জানিয়ে বিহিত চেয়েছি।”
বালি তোলার জন্য গোলমালের কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগমের তরফে নির্মীয়মাণ রাস্তাটির ‘প্রজেক্ট ম্যানেজার’ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে জানিয়েই কাজ করছিলাম। তবু কিছু ভুল হয়ে থাকলে সংশোধন করা হবে।’ পূর্ত দফতরের বোর্ড ব্যবহার নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘ওটা ঠিকাদার সংস্থার ভুল।’’
মহকুমাশাসক নৃপেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, ভূমি দফতরকে ওই বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে। ব্লক ভূমি দফতরের আধিকারিক জয়ন্ত ভড় বলেন, “সেতু থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা নিষিদ্ধ। কিছু ক্ষেত্রে সেতু থেকে দেড় কিলোমিটার তফাতে বৈধ বালিখাদকে অনুমতি দেওয়া হয়। হরিণখোলার বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি।’’