উলুবেড়িয়ায় বেআইনি কারবার অব্যাহত, অভিযোগ দামোদরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

শুক্রবার সকালে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের গদাইপুর এলাকায় দেখা গেল, স্থানীয় একটি ইটভাটার জন্য দামোদরের চর থেকে মাটি কাটছেন সেখানকার শ্রমিকেরা।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share:

বেআইনি: দামোদর থেকে অবাধে মাটি কাটা চলছে। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের গদাইপুরে। নিজস্ব চিত্র

সরকারি বিধি-নিষেধ আছে খাতায়-কলমে। কিন্তু হাওড়া জেলায় প্রকাশ্যে নদী থেকে বালি তোলা বা পাড়ের মাটি কাটা চলছে, এ অভিযোগ রয়েছে নানা এলাকায়। এমনকি, এ নিয়ে বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতের সমরুক শীতলচন্দ্র ইন্সটিটিউটে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে ভূমিকর্তার সঙ্গে এক পুলিশকর্তার বাদানুবাদের পরের দিনও দেখা গেল, ছবিটা বদলায়নি।

Advertisement

শুক্রবার সকালে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের গদাইপুর এলাকায় দেখা গেল, স্থানীয় একটি ইটভাটার জন্য দামোদরের চর থেকে মাটি কাটছেন সেখানকার শ্রমিকেরা। ছোট গাড়ি করে সেই মাটি নিয়ে গিয়ে জড়ো করা হচ্ছে ভাটার পাশে। ভাটা-মালিকের দাবি, ‘‘আমরা সরকারের থেকে মাটি কাটার অনুমতি নিয়েছি। সে জন্য নির্দিষ্ট রাজস্বও দিয়েছি সরকারকে।’’ কিন্তু ভূমি দফতরের দাবি, এ ভাবে নদীর পাড় বা চর থেকে সরাসরি মাটি কাটা বেআইনি। এতে নদী ভাঙনের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ক্ষতি হয় চাষের জমিরও। একই আশঙ্কা রয়েছে পরিবেশবিদদেরও।

বৃহস্পতিবারই উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বেআইনি ভাবে নদী থেকে বালি তোলার প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, নিষিদ্ধ হলেও উলুবেড়িয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দামোদরের বুক থেকে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। অথচ ব্লক ভূমি দফতর নীরব দর্শক। এর পরই ওই প্রবণতা বন্ধ করা নিয়ে উলুবেড়িয়া থানার আইসি কৌশিক কুণ্ডুর সঙ্গে বচসায় জড়ান ব্লক ভূমিকর্তা সুমন পাল। দু’পক্ষের চাপান-উতোরে হস্তক্ষেপ করতে হয় জেলাশাসক মুক্তা আর্যকে। তিনি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায়কে বালি ও মাটি চোরদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

Advertisement

কিন্তু কোথায় নজরদারি?

শুক্রবার গদাইপুরে যে ছবি দেখা গিয়েছে, তা গদাইপুর ছাড়াও বোয়ালিয়া, গড়চুমুক, বাগনানের রবিভাগ বা পাঁচানি এলাকাতেও প্রায়ই দেখা যায় বলে এলাকাবাসীর দাবি। গদাইপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এবং রাতে বড় বড় ডাম্পার করে বালি ও মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ঝামেলা হয়।’’ আর এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘ব্লক প্রশাসনকে বহু বার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো এসে মাটি কাটা ও বালি তোলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কয়েক দিন তা বন্ধও থাকে। তারপর আবার যে-কে সেই।’’ আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে বোয়ালিয়ার কাছে বেআইনি ভাবে নদীপাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করেছিলেন ব্লক প্রশাসনের কিছু কর্তা। কয়েকটি ডাম্পারও আটক করা হয়। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকেই আবার দেখি, মাটি কাটা চলছে । ডাম্পারও চলে এসেছে।’’ পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের একাংশের মদতেই ওই বেআইনি কাজ চলছে, এমন অভিযোগও এ দিন শোনা গিয়েছে।

এ দিন অবশ্য গদাইপুরে মাটি কাটার কথা জানতে পেরে ব্লক ভূমি দফতরের কর্তারা এলাকা পরিদর্শনে যান। উলুবেড়িয়া-১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুমন পাল বলেন, ‘‘ওখানে এক জায়গায় দেখেছি, প্রচুর মাটি কাটা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে থানায় অভিযোগ করব।’’

বস্তুত, এফআইআর করাকে কেন্দ্র করেই সুমনবাবুর সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বচসায় জড়িয়েছিলেন আইসি কৌশিকবাবু। সুমনবাবুর অভিযোগ ছিল, এফআইআর করা হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। সেই অভিযোগ উড়িয়ে আইসি-র পাল্টা দাবি ছিল, সময়মতো ভূমি দফতর অভিযোগই জানায় না। পুলিশই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিযান চালায়। এ ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন জেলা (গ্রামীণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিস মৌর্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement