শ্রীরামপুরের বল্লভপুর শ্মশানকালী। ছবি:প্রকাশ পাল।
শনিবার সন্ধ্যাতেই ইঙ্গিত মিলেছিল। রাত যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে ভিড়। যা ছড়িয়ে পড়েছে হুগলির প্রাচীন জনপদ পান্ডুয়ার অলিগলি থেকে রাজপথে। রবিবারেও একই ছবি। সন্ধ্যার পর থেকে রাত যত গভীর হয়েছে, পাল্লা দিয়ে র্সাতয় নেমেছে জনতা। বাহারি আলোর সারি এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছে দর্শনার্থীদের।
শুধু পান্ডুয়া ব্লকই নয়, হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুরু করে পাশের বর্ধমান জেলার মেমারি, কালনা, নদিয়ার নবদ্বীপ-সহ নানা জায়গা থেকে পান্ডুয়ায় কালীপুজো দেখতে এসেছিলেন মানুষ। কালনার পাহারপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম প্রতি বছর পরিবার নিয়ে পান্ডুয়ায় কালীঠাকুর দেখতে আসেন। এ বারেও রাতভর পরিবার নিয়ে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড় এড়াতে বিকেল বিকেল চলে এসেছিলাম। কিন্তু ভিড় এড়ানো গেল কোথায়? তবে সকলেরই খুব ভাল লেগেছে।’’
নবদ্বীপের বাসিন্দা সুজিত দেবনাথের শ্বশুরবাড়ি পান্ডুয়ায়। শনিবার বিকেল থেকেই হেঁটে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘পান্ডুয়ায় কালীপুজোর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে! প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। ঠিক করেছি, একেবারে বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখে বাড়ি ফিরব।’’ ফি বছর কালীপুজোর সময় কলকাতার বেলঘরিয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পান্ডুয়ায় বাপের বাড়িতে চলে আসেন রত্না ঘোষ। এ বারেও এসেছেন। বললেন, ‘‘প্রতিবার একেবারে রেডি থাকি। কোনওভাবেই এটাকে মিস করতে চাই না।’’
এ বার এখানকার বেশিরভাগ পুজোই থিম নির্ভর। বোসপাড়া ফ্রেন্ডস ক্লাব ৭৫ ফুট লম্বা ও ৬৫ ফুট চওড়া মণ্ডপ তৈরি করেছে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের অনুকরণে। হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি পুরো মণ্ডপ। ক্লাব সম্পাদক অসীম ঘোষ জানান, মেদিনীপুরের শিল্পী গণেশ দাস মণ্ডপ তৈরি করেছেন। নেতাজি সঙ্ঘ, তরুণ সঙ্ঘ, খারাজিপাড়া বারোয়ারি, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ, আনন্দম সঙ্ঘ, মিতালি সঙ্ঘের পুজোও নজর কেড়েছে।
পান্ডুয়ার পাশাপাশি জেলার অন্যত্রও ধুমধামের সঙ্গে দেবীর আরাধনা চলছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই জনতার ঢল নেমেছে শ্রীরামপুরের বল্লভপুর শ্মশানকালীর পুজোয়। রবিবারেও অসংখ্য ভক্ত দেবীদর্শনে আসেন। শ্রীরামপুর থানার পুজোয় মডেলের মাধ্যমে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। শহরের বেনিয়াপাড়া লাহিড়িবাড়ির পুজো প্রায় আড়াই শতকের পুরনো। সাবেক রীতি অনুযায়ী এই পরিবারের পুজোও দেখতে আসেন অনেকে। পরিবারের সদস্য দেবাশিস লাহিড়ি জানান, পুজোতে অনেকে আসেন। তবে সংস্কারবশে দেবীর কোনও ছবি তোলা হয় না। শ্রীরামপুরের রেন্টাল হাউসিংয়েও আয়োজন করা হয়েছে কালীপুজোর।