প্রশাসক এলে পরিষেবার কী হবে, চিন্তায় হাওড়া

এক দিকে খরচের চাপে কোষাগারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা। তার উপরে বাকি রয়েছে একাধিক প্রকল্পের কাজ

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

হাওড়া পৌর নিগম। ফাইল চিত্র

নির্বাচনে না গিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করার সিদ্ধান্তে কার্যত টালমাটাল অবস্থা হাওড়া পুরসভার। এক দিকে খরচের চাপে কোষাগারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা। তার উপরে বাকি রয়েছে একাধিক প্রকল্পের কাজ। পরিস্থিতি এমনই যে, ৬৬টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতে ন্যূনতম পুর পরিষেবাটুকু দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। সব থেকে বড় কথা, বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ডের মেয়র, মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলরদের ভূমিকা আগামী দিনে কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পুরবাসীরা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সার্টিফিকেট কী ভাবে পাবেন, প্রশ্নের মুখে তা-ও।

Advertisement

কয়েক মাস আগে হাওড়া পুরসভার তৃণমূল বোর্ডের মেয়র পারিষদেরা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই প্রস্তাবে গুরুত্ব না দিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভায় পুর আইনের সংশোধনী বিল এনে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নির্বাচন স্থগিত করে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। হাওড়া পুরসভা তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটায় পুরসভার অন্দরমহলে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সংশয় দেখা দিয়েছে কাউন্সিলরদের মধ্যেও।

আগামী ১০ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান বোর্ডের। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দিনের পর থেকে মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলরদের ভূমিকা কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বাসিন্দাদের প্রয়োজনে প্রতিদিন বিভিন্ন শংসাপত্রে কাউন্সিলরদের যে সই করতে হয়, এখন তা কে বা কারা করবেন, তা-ও জানা যায়নি।

Advertisement

এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘শুধু শংসাপত্র দেওয়া নয়, পাড়ায় কোনও পশুর মৃতদেহ পড়ে থাকলেও লোকজন কাউন্সিলরকে ফোন করেন। অথচ, এখন আমাদের হাতে ক্ষমতা না থাকলে পুর অফিসারেরা কি আমাদের কথা মানবেন?’’

বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণও। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়গুলি আমি রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছি। চন্দননগর পুরসভাতেও প্রশাসক রয়েছেন। তাঁর সঙ্গেও কথা বলব।’’

গত চার বছরে হাওড়া পুরসভার বহর যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে কাজকর্মের পরিধি। খরচের পরিমাণও সেই সঙ্গে বেড়েছে অনেকটাই। বালি পুরসভা সংযুক্ত হওয়ায় ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৬। বরো অফিসের সংখ্যা পাঁচ থেকে বেড়ে হয়েছে সাত। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে গত চার বছরে পুরসভায় চাকরি দেওয়া হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার জনকে। মেয়র রথীন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘গত চার বছরে হাওড়া পুরসভা প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। সেই টাকা দিয়েই হাওড়ার উন্নয়ন ও কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কে প্রায় ১০০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতও করা হয়েছে।’’

মেয়র এ কথা বললেও পুর অফিসারদের একাংশের অভিযোগ, প্রথম দু’বছর আয় বাড়লেও বর্তমানে আয়ের থেকে ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে সব ক’টি প্রকল্পের গতি থমকে গিয়েছে। ভাঙতে হয়েছে স্থায়ী আমানতও। পুরকর্মী ও অফিসারদের আশঙ্কা, প্রশাসক থাকার মেয়াদ দীর্ঘ হলে পুরসভার অর্থসঙ্কট বাড়বে। কারণ, অধিকাংশ দফতরে ঠিক ভাবে কাজ হবে না।

প্রশ্ন উঠেছে, যে পরিমাণ খরচ বেড়েছে, সেই অর্থের সংস্থান করে প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করা বা কর্মীদের নিয়মিত বেতন দেওয়া কি প্রশাসকদের পক্ষে সম্ভব? মেয়র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আমাদের অগাধ ভরসা। কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’

প্রায় একই বক্তব্য মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচ জন বিধায়ক আছেন। সাংসদ আছেন। তা ছাড়া, দলের কাউন্সিলরেরা আছেন। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। কোনও অসুবিধা হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement