সৌজন্য: শব্দবাজি রুখতে এ ভাবেই ঘরে ঘরে বিলোনো হল মিষ্টি, প্রদীপ। বৃহস্পতিবার হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
সদিচ্ছাই শেষমেষ কাবু করল ‘দৈত্য’কে।
গত বছর কালীপুজোর রাতে যে শব্দদৈত্যের দাপট দেখেছিল হাওড়া, এ বছর সেই তুলনায় সেই দাপট অনেকটাই ছিল কম। শুধু তা-ই নয়, শহরের যে বহুতলের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে প্রতিবারই বেপরোয়া ভাবে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ ওঠে, এ বার সেই আবাসনের বাসিন্দারাই বাজি না ফাটিয়ে আশপাশের বস্তিতে গিয়ে মিষ্টি ও মাটির প্রদীপ দিয়ে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানালেন। এই অভিনব নজির সৃষ্টি করলেন উত্তর থেকে দক্ষিণ হাওড়ার বিভিন্ন বহুতল আবাসনের বাসিন্দারা। হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, কালীপুজোর আগে তাঁরা শব্দবাজি-সহ বিদেশি আলোর বিরুদ্ধে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে যে প্রচার চালিয়েছিলেন, সাধারণ মানুষের এই উদ্যোগ সেই সদিচ্ছারই ফল।
প্রতি বছর বাজির বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের হাজার প্রচার সত্ত্বেও সন্ধ্যা থেকেই হাওড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়া শব্দবাজি ফাটতে শুরু করত। যত রাত বাড়ত, শব্দ দৈত্যের দাপটও ততই বাড়ত। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট থেকে তাই এ বার নতুন পদ্ধতি নেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের পদস্থ কর্তারা, সকলে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বিভিন্ন বহুতল আবাসন এবং সাধারণ মানুষকে বোঝাতে শুরু করেন কালীপুজো বা দীপাবলি মূলত আলোর উৎসব, বাজির নয়। বাজি ফাটালে বায়ুদূষণ থেকে শব্দদূষণ, সবই হয় এবং তাতে আমাদেরই ক্ষতি হয়। পুলিশ কমিশনারেট থেকে সমস্ত পুলিশের পরিবার ও সাধারণ মানুষকে তাই বাজি না ফাটিয়ে মাটির প্রদীপ জ্বেলে দীপাবলি পালন করতে আবেদন করা হয়। পুলিশ কমিশনারের সেই আবেদনে হাওড়া পুলিশ কমিশারেটের সঙ্গে যুক্ত সব পুলিশের পরিবার বাড়িতে প্রদীপ জ্বালিয়েই ওই দিন দীপাবলি পালন করেছেন।
হাও়ড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের এই নতুন ভাবনায় কাজ হয়েছে। বাজি অনেক কম ফেটেছে। সদিচ্ছা থাকলে যে সব করা যায়, তা হাওড়া প্রমাণ করেছে। তা ছাড়া বহুতলের বাসিন্দারা যে ভাবে বাজি না ফাটিয়ে এলাকার বস্তির বাসিন্দাদের মিষ্টি ও মাটির প্রদীপ বিতরণ করেছেন, তা এক কথায় নজিরবিহীন।’’ এ ভাবে উৎসব পালন করে বেজায় খুশি শিবপুরের ওই আবাসনের বাসিন্দাদের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুভাষ সুলতানিয়া। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। ওঁদের ধন্যবাদ। এ বার বাজি ফাটিয়ে টাকা নষ্ট না করে গরিব, দুঃখীদের এবং অনাথ আশ্রমে মিষ্টি খাইয়ে, সকলকে মাটির প্রদীপ দিয়ে আমরা দীপাবলি পালন করেছি।’’
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু শিবপুরের ওই আবাসন নয়, মধ্য হাওড়া আবাসন থেকে শুরু করে উত্তর হাওড়ার একাধিক বহুতলে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই দীপাবলি পালন করা হয়েছে। পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, এর ফলে সম্প্রীতি ও সুস্থ পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বাজিও কম ফেটেছে।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) দেবব্রত দাস জানান, বাজি যে কম ফেটেছে এবং সাধারণ মানুষের যে বড় ধরনের সমস্যা হয়নি, তা বোঝা যায় ওই দিনের অভিযোগের সংখ্যা এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া বাজির পরিমাণ থেকে। তিনি বলেন, ‘‘কালীপুজো ও দীপাবলি এক দিনে পড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা ছিল বেশি বাজি ফাটার। সে জন্য বিকেল থেকেই পুলিশ প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পুলিশকে কিছু করতে হয়নি।’’
ডিসি সদর জানান, কালীপুজোর দিন বাজি ফাটানোর জন্য ১০০ ডায়ালে অভিযোগ এসেছে মাত্র একটি। শব্দবাজি ধরা পড়েছে মাত্র ৯৫ কেজি। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।