বনভোজনের পর ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। ছবি: সুব্রত জানা
গড়চুমুকের ৫৮ গেটে থার্মোকল এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল হাওড়া জেলা প্রশাসন। শনিবার ৫৮ গেটে জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। হাজির ছিলেন জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। সেই বৈঠকেই থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।
জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই চড়ুইভাতির মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। যাঁরা চড়ুইভাতি করতে আসবেন, তাঁরা আর থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা-বাটি বা গ্লাস ব্যবহার করতে পারবেন না। তাঁদের শালপাতা এবং অন্য পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হবে।’’ যদি কেউ নিয়ম ভাঙেন তা হলে কী হবে? জেলাশাসক জানান, রাতারাতি কোনও নিয়ম চালু করেই শাস্তির ব্যবস্থা করা যায় না। ওই এলাকায় থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার যাতে কেউ না করেন, তার জন্য প্রচার চলবে। তাতে কী রকম ফল হল তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। যদি দেখা যায় কাজ হচ্ছে না, তখন নিশ্চয় শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবা হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে চড়ুইভাতি করার সময়ে ডিজে বাজানো এবং মদ্যপান করা যাবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা মেটাতে সেচ দফতরের বাংলোর মাঠকে বাছা হয়েছে। কারণ, চড়ুইভাতির জন্য বহু মানুষ গাড়ি নিয়ে আসেন। সেগুলি কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে আগে বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে গোলমালে জড়িয়েছে। তা এড়াতেই এই ব্যবস্থা।
আবর্জনা: হরিণের এনক্লোজারের সামনে জমেছে থালা। ছবি: সুব্রত জানা।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, চড়ুইভাতি করতে এসে সবাই হয়তো নিয়ম ভাঙেন না। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জন্য বাকিদের অসুবিধা হয়। তা ছাড়া এখানে হরিণ প্রকল্প আছে। সেখানে অনেক পশুপাখিও আছে। চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনের বিশৃঙ্খল আচরণের জন্য হরিণ প্রকল্পের পশুপাখিদের যেন কোনও সমস্যা না হয়, সেটা কঠোর ভাবে দেখা হবে।
আজ, রবিবার থেকেই এই এলাকায় থার্মোকলের ও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ সংক্রান্ত প্রচার করা হবে। শুধু চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনের মধ্যে নয়, স্থানীয় দোকানদারদেরও প্রচার-অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আটান্ন গেটের দোকানদাররা থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা-বাটি ও কাপ বিক্রি করেন। তাঁরা যাতে ওই সবের বদলে শালপাতা এবং অন্য পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র বিক্রি করেন, সে কথাই তাঁদের বলা হবে।
হাওড়া জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গড়চুমুকের ৫৮ গেট। এখানে জেলা পরিষদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে, রাস্তা তৈরি করেছে। আছে বন দফতরের হরিণ প্রকল্প। যা ‘মিনি জু’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সবের টানে এখানে প্রতি বছর শীতের মরসুমে হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসেন। চড়ুইভাতিও করেন। অভিযোগ, খাওয়া-দাওয়ার কাজে ব্যবহার করেন থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা, বাটি ও গ্লাস। সেগুলি তাঁরা যত্রতত্র ফেলে দেন। তা আবার গিয়ে পড়ে গঙ্গা এবং দামোদরে। ফলে, পরিবেশ ও নদী দূষণ হয়। পরিবেশবিদরা বারবার এই জায়গায় থার্মোকল ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নতুন সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি।