হাসপাতালে মশারিতে রোগী।
রোগীর চাপ বাড়ছেই। অথচ সেই অনুপাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। নেই যথেষ্ট সংখ্যক নার্স। পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই রোগীর আত্মীস্বজনের। শুধু চিকিৎসকই নয়, হাসপাতালে সাফইকর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। হাসপাতাল চত্বরে অনেক জায়গাতেই দেখা হল জল জমে রয়েছে। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের পিছন দিকে ঝোপজঙ্গলে ভর্তি। এই রকম লঝঝড়ে পরিকাঠামো নিয়েই মহকুমায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় নেমেছে স্বাস্থ্য দফতর। খোলা হয়েছে ফিভার ক্লিনিক।
সূত্রের খবর, গড়ে জ্বরে আক্রান্ত ৭০-৮০ জনের রক্তের নমুনা প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। শহরের তিনটি ফিভার ক্লিনিক ধরলে সংখ্যাটা দ্বিগুণের বেশি। যেখানে মহকুমায় ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরই জানিয়েছে সেখানে মহকুমার হাসপাতালেই ডেঙ্গি মোকাবিলার এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে।
ওয়ালশ হাসপাতালে পরিকাঠামোর ছবিটা ঠিক কি রকম?
হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে মোট ২৭০টি শয্যা রয়েছে। শয্যার অনুপাতে রোগী ভর্তির পরিমাণ অবশ্য অনেকটাই বেশি। ফলে মেঝেতেও ঠাঁই হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রায় সাড়ে ৩শো রোগী ভর্তি থাকেন নিয়মিত। চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৩২। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আরও চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু শুনছে কে! তার উপর ডেঙ্গির এমন প্রাদুর্ভাবে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’দিন আগে এক জন চিকিৎসককে এখানে পাঠানো হয়েছে।’’
হাসপাতাল চত্বরে জমে রয়েছে জল।
রবিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, মেঝেতেই বিছানা পেতে রাখা হয়েছে অনেক রোগীকে। তার পরেও ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। সিঙ্গুরের বড়া এলাকা থেকে জ্বরে আক্রান্ত এক মহিলাকে হাসপাতালে এনেছিলেন তাঁর পরিবার। শয্যা না থাকায় তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করলেন তাঁরা। ভর্তি হতে আসা রোগীদের আত্মীয়স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের চারপাশে যেমন অবস্থা তাতে রোগীর সঙ্গে আসা লোকজনকেও না ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতে হয়! যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতাল চত্বর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয়। ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। আর ডেঙ্গির ভাইরাস বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশা যাতে ডিম পাড়ার মতো সহায়ক পরিবেশ না পায়, সে ব্যাপারেও তাঁরা সতর্ক। হাসপাতাল চত্বরে মশার লার্ভা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে।
রবিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগ বা প্যাথোলজি বিভাগ বন্ধ থাকে। ফলে এ দিন ফিভার ক্লিনিক খোলা ছিল না। এ দিন জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়েছে জরুরি বিভাগে। ডেঙ্গি নিয়ে মহকুমা য় যেখানে জরুরি অবস্থা দেখা দিয়েছে সেখানে ছুটির দিনে বহির্বিভাগ বা প্যাথোলজি বিভাগ বন্ধ থাকার যৌক্তিকতাও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোগীর পরিবার।
শ্রীরামপুরের দে স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা সুবোধ শা ২৯ জুলাই থেকে জ্বরে ভুগছেন। তাঁর বাড়ির লোকেরা জানান, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানো হয় গত বৃহস্পতিবার। রিপোর্ট হাতে পান শনিবার। তাতে দেখা যায়, এনএস ১ পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সুবোধের দাদা আনন্দ শা বলেন, ‘‘ভাইয়ের রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু রবিবার থাকায় তা সম্ভব হয়নি। সোমবার হবে।’’ আনন্দের বক্তব্য, ‘‘জরুরি অবস্থাতেও যাতে রবিবার সব পরিষেবা মেলে, সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত করা উচিত ছিল প্রশাসনের।’’
এ দিকে জ্বর নিয়ে রোগী চাপ বাড়ায় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জন্য পৃথক একটি ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছেন। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মূলত অন্য রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কায় ডেঙ্গি রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু এত জ্বরের রোগী আসছেন যে, একটি ওয়ার্ড খালি করে জ্বরের রোগী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ব্লাডব্যাঙ্ক না থাকায় রক্তের প্রয়োজনে রোগীর আত্মীয়দের তা জোগাড় করতে হবে।